হলফনামা বা এফিডেভিট কি? কীভাবে হলফনামা বা এফিডেভিট করতে হয় এবং খরচ কত লাগে?

হলফনামা বা এফিডেভিট সম্পর্কে ধারণা ও করতে খরচ কত?

 

 

 

১। হলফনামা বা এফিডেভিট কি?

এফিডেভিট বা হলফনামা হচ্ছে, কোনো বিষয়ে সত্যতাসহ এর সমর্থনে ঘোষণা দেওয়া।

যথাযথ নিয়ম-কানুন মেনেই যে সম্পাদন করতে হয় হলফনামা।

২। কোন কোন কাজে হলফনামা বা এফিডেভিট প্রয়োজন লাগে

১. গাড়ী বা জমি

২. যে কোন সম্পদ কেনাবেচা

৩. বিবাহ কিংবা তালাক

৪. নাম পরিবর্তন বা সংশোধন

৫. পাসপোর্টে নাম সংশোধন, আম-মোক্তারনামা,

বায়নানামা

৬. যে কোন চুক্তিনামা ও মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা কাজে প্রয়োজন হয় এফিডেভিট বা হলফনামার।

এ ছাড়া বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ, বায়নানামা তৈরির কাজেও লাগে হলফনামা।

 

৩। কীভাবে হলফনামা বা এফিডেভিট করেতে হয়?

হলফনামা দুইশত টাকার নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে (ক্ষেত্র বিশেষে এরও বেশী) লিখে, যে কোন ম্যাজিষ্ট্রেট (১ম/২য়/৩য় শ্রেণীর) অথবা নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে সম্পাদন করা হয়।

 

৪। কি ভাবে ব্যক্তিগত তথ্য কারণ লিপিবদ্ধ করতে হয়?

এফিডেভিট বা হলফনামায়, হলফনামাকারীর পূর্ণ নাম, ঠিকানা, বাবা-মায়ের নাম, জাতীয়তা, বয়স, পেশা ও ধর্ম উল্লেখ করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। হলফকারী ব্যক্তি কী বিষয়ে, কী কারণে ও কেন হলফ করছেন তাঁর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে হবে।

কোনো জমিজমা সহ যোন সম্পদের হলে তাহার বর্ণনা বা তফসিল উল্লেখ করতে হবে।

 

৫। বিয়ের বা তালাক জন্য হলফনামা করার নিয়ম 

বিয়েসংক্রান্ত হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নাম, বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানা, বয়স ও পেশা উলে্লখ করতে হবে। বিয়ের তারিখ, কত টাকা দেনমোহর নির্ধারণ হয়েছে এবং দেনমোহরের কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে সেটাও উলে্লখ থাকতে হবে। প্রয়োজনে সাক্ষীদের নাম ঠিকানাও দিতে হবে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও এসব তথ্য উলে্লখ করতে হবে। কী কারণে তালাক দেওয়া হয়েছে এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকতে হবে। তবে বিয়ের হলফনামায় স্বামী ও স্ত্রী দুজনের স্বাক্ষর লাগবে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে যিনি বিবাহবিচ্ছেদের হলফনামা করছেন শুধু তিনি স্বাক্ষর দেবেন।

যেকোনো হলফনামায় অবশ্যই যে তারিখে হলফনামাটি সম্পাদন করা হচ্ছে সেই তারিখটি উলে্লখ করতে হবে। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পূর্ব নাম কী ছিল এবং বর্তমান নামে কী সংশোধন হয়েছে তা স্পষ্ট করে লিখতে হবে।

হলফকারীকে হলফনামার সঙ্গে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে এবং স্বাক্ষর করতে হবে।

 

৬। হলফনামার আইনজীবীর প্রয়োজনীয়তা কি? 

হলফনামার শেষ অংশে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে শনাক্ত করাতে হবে এবং আইনজীবীকে উলে্লখ করতে হবে এই হলফনামাটি তার সামনে সম্পন্ন করা হয়েছে। আইনজীবীকে আইনজীবী সমিতির সদস্য নম হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। মনে রাখতে হবে যেকোনো হলফনামা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে বিষয়ে হলফনামাটি করা হচ্ছে তার সত্যতার বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা।

 

৭। হলফনামা বা এফিডেভিট খরচ কত লাগে?

হলফনামা সম্পাদন করতে হয় ২০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। তবে বিবাহবিচ্ছেদের হলফনামা করতে হবে ৫০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। হলফনামা লেখার পর (কম্পোজ বা টাইপ) নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সত্যায়ন করাতে হবে। নিয়ম হচ্ছে যিনি হলফনামাটি করলেন তিনি নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তার হলফনামাটি সম্পর্কে সত্যপাঠ করবেন। তখন নোটারি পাবলিক বা ম্যাজিস্ট্রেট হলফনামাটি যাচাই-বাছাই করে এর ওপর স্বাক্ষর দেবেন এবং একটি বিশেষ সরকারি সিল ব্যবহার করে এতে ক্রমিক নম্বর বসাবেন। হলফনামাটির একটি ফটোকপি তিনি রেখে দেবেন।

 

হলফনামা বা এফিডেভিট কি জানা জরুরী 

কোনো মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করলে ক্ষেত্রবিশেষে হলফনামা আদালতে দাখিল করতে হয়। বিশেষ করে দেওয়ানি মোকদ্দমায় অন্তর্বর্তীকালীন কোনো প্রতিকার চাইলে এবং এর জবাব দিলে বিচারপ্রার্থীকে হলফনামা দিতে হয় দরখাস্তের বা জবাবের সঙ্গে। এই হলফনামায় ছবি লাগে না এবং আদালতের সেরেস্তাদারের সামনে স্বাক্ষর করতে হয়। সেরেস্তাদার যাচাই-বাছাই করার পর আদালতে প্রেরণ করেন। জমি কেনা-বেচার দলিলের সঙ্গে দলিল নিবন্ধনের সময় হলফনামা দিতে হয় সাবরেজিস্ট্রি অফিসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *