JK life for Diabetes Patients– ডায়বেটিস রােগীর ক্ষেত্রে আমরা সবাই জানি ডায়বেটিস সাধারণত দুই প্রকার টাইপ ১ টাইপ ২ । ডায়বেটিস আছে কিনা বা ভবিষ্যতে হবে কিনা তা কিন্তু আপনি আগেই টেস্ট করে জেনে নিতে পারেন। আপনার ডায়বেটি রেজিস্ট্যান্স আছে কিনা তা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় সম্ভব।

সাধারণত যাদের প্যানক্রিয়াস থেকে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরী হয় না তারাই টাইপ ১ ডায়বেটিসে ভুগছেন। টাইপ ১ ডায়বেটিস রােগীর সংখ্যা খুবই কম এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ জটিল। এইক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে ইনসুলিনকে পুরােপুরিভাবে বাদ দেওয়া সম্ভব নয় তবে JK Lifestyle এর মাধ্যমে ঔষধের মাত্রা কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। এই কাজটি আপনারা কেউ নিজে নিজে করতে যাবেন না, অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ও তত্বাবধানে থেকে সব কিছু ভালাে করে জেনে বুঝে তবেই শুরু করবেন। ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায়? | ডা: মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর কবির | ডাক্তারি পরামর্শ

এবার আসি টাইপ ২ ডায়বেটিস রােগীর কথায়। আমরা সবাই জানি আশেপাশে অসংখ্য মানুষ টাইপ ২ ডায়বেটিসে ভুগছেন যার মূলে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ফলশ্রুতিতে শরীরে যােগ হয় Insulin Resistance এবং বাসা বাঁধে ডায়বেটিসসহ নানান রকম Lifestyle Disease। বিশেষভাবে উল্লেখ্য টাইপ-২ ডায়বেটিসে শরীরে প্রয়ােজনের তুলনায় বেশি ইনসুলিন তৈরী হয় এবং তা দীর্ঘ সময় রক্তে উপস্থিত থাকে। এর প্রভাবে রক্তে চিনির মাত্রাও বেশি থাকে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে রােগীকে ঔষধ হিসেবে ট্যাবলেট ও ইনসুলিন দেওয়া হয়। এর ফলে রােগীর শরীরে সৃষ্টি হয় হাইপার ইনসুলিনিমিয়া অথ্যাৎ মাত্রাতিরিক্ত ইনসুলিনের উপস্থিতি স্বল্প অথবা দীর্ঘ দিন ধরে ডায়বেটিস রােগে ভুগছেন এমন রােগীদের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম সমস্যা হল তারা ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। সাধারনত এই রােগের চিকিৎসায় তারা ঔষধ হিসেবে ট্যাবলেট বা ইনসুলিন গ্রহন করার কারনে শরীরে সৃষ্টি হওয়া হাইপার ইনসুলিনিমিয়ার প্রভাবে ক্ষুধা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। Jk lifestyle guideline PDF । ফ্যাট এডাপটেশন কি? কিভাবে করে

এই রােগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রচলিত কথা হল ডায়বেটিস কখনাে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়না, ঔষধ ও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনে এই রােগ নিয়ন্ত্রনে থাকে। JK Lifestyle এর মাধ্যমে আপনাদেরকে একটি বিরাট সুসংবাদ দিতে চাই তা হল JK Lifestyle পরিপর্ণভাবে অনুসরণ করে ঔষধ ছাড়া এই রােগটি পুরােপুরি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এমনকি নির্মূল করাও সম্ভব। এজন্য অবশ্যই আপনাকে পুরাে বিষয়টি জানতে ও মানতে নিবেদিত হতে হবে। ডায়বেটিক রােগীর রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথম ভূমিকা পালন করবে JK Lifestyle এর নির্ধারিত স্বল্প মাত্রার শর্করা, পরিমিত মাত্রার উন্নত প্রােটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার। সুতরাং আপনার রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ঔষধ বা ইনসুলিন নিচ্ছেন তার কোন প্রয়ােজন নেই। তাই আপনাকে এগুলাে বাদ দিয়ে শুরু করতে হবে। আপনার জন্য সপ্তাহ ভিত্তিক পরিকল্পনাটা চলুন জেনে নেয়া যাক।

প্রথমে আপনার ওজন কমাবেন এবং মেইনটেইনে গিয়ে বেশ কিছু খাবার আপনি খেতে পারবেন/ অসুস্থ বা নন-অর্গানিক খাবার আমরা কখনো গ্রহণ করবো না।

প্রথমে নিশ্চিত হউন যে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স মুক্ত হয়েছেন কিনা অতপর আপনি ৫টি শর্ত মেনে চলবেন।

Caption: 5 terms you have to follow for JK life Style

ফ্যাট এডাপ্টেশন কি? কিভাবে ফ্যাট অ্যাডাপটেশন করতে হয়? ১ম সপ্তাহ- ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন

  1. আগেই বলেছি সাধারণত এই রােগীরা ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না তাই ৪-৬ বেলা খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। প্রচলিত চিকিৎসায় যেসব ঔষধ তারা গ্রহন করেন তার ফলেই এমনটা হয়ে থাকে, যেহেতু আপনি ঔষধ বাদ দিয়ে শুরু করবেন সেহেতু এমনিই ক্ষুধার প্রবনতা কমে আসবে।
  2. তবে প্রথম দুই/চার দিন বারবার ক্ষুধা লাগবে সেজন্য ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন পর্বে যখনি আপনার ক্ষুধা লাগবে তখনি আপনি JK Lifestyle এর নির্ধারিত খাবার পেট ভরে খাবেন।
  3. চার/পাঁচ দিনের মধ্যে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রনে আসবে যদি তা না হয় তাহলে আপনার ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন পর্বটি আপনি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারেন।
  4. আপনাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যেহেতু আপনি ডায়বেটিস এর সকল ঔষধ ও ইনসুলিন বন্ধ করে JK Lifestyle মেনে চলা শুরু করবেন তাই প্রথম দুই সপ্তাহ প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ১বার ডায়বেটিস মাপবেন এবং খাবার খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে আরেকবার মাপবেন। একটি কাগজে চার্ট করে নিয়মিত এই দুই সপ্তাহ ডায়বেটিস এর পরিমাপ লিখে রাখবেন এবং পরবর্তি সাক্ষাতে তা অবশ্যই নিয়ে আসবেন। এই চার্টের মাধ্যমে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার রােগ নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারটি।
  5. ফ্যাট এডাপ্ট্যাশন এর পরের সপ্তাহ- ড্রাই ফাস্টিং বা রােজা রাখবেন। এরপর থেকে ড্রাই ফাস্টিং, ওয়াটার ফাস্টিং ও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর সমন্বয়ে খাবারের রুটিন করবেন। অথ্যাৎ এক/দুই দিন ওয়াটার ফাস্টিং করে পরের এক/দুই দিন ড্রাই ফাস্টিং করবেন এবং এরপর একদিন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করতে পারেন।
  6. এভাবে খাবার গ্রহনের পাশাপাশি ব্যায়াম, ঘুম ও মানসিক শান্তির চর্চা অবশ্যই চালিয়ে যাবেন। উপরের সংক্ষিপ্ত আলােচনায় কিভাবে JK Lifestyle শুরু করবেন সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই আপনারা অনেকটা স্পষ্ট ধারনা পেয়েছেন।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কি?

JK Lifestyle এর অনুসারীদের সর্বাধিকবার করা একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হলাে “আমি কি সারাজীবন এভাবেই খাবাে?” উত্তরে প্রথমেই বলে নেই আমাদের সকলের উদ্দেশ্য একটি সুস্থ জীবন আর JK Lifestyle টি একটি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা। তাহলে সুস্থতা নিশ্চিত করতে এই ধারা অব্যাহত কেন রাখবেন না! তবে হ্যা, খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছুটা পরিবর্তন আপনি করতে পারবেন। আপনি যখন আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে যাবেন তখন আপনার খাবারের তালিকায় যুক্ত করতে পারবেন কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার যা সচরাচর আমরা খেয়ে থাকি। যেহেতু ওজন আপনার শরীরের নানান রােগের মূল কারন সেহেতু এর থেকে বেরিয়ে আসলেই আপনি একজন সুস্থ মানুষ। তখন স্বাভাবিক মাত্রায় প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহনে কোন বাধা নেই। চলুন জেনে নেই কি কি খাবার আপনি আপনার নিত্যকার খাবার তালিকায় যােগ করতে পারবেন

  • ঢেঁকিছাটা লাল চালের ভাত
  • টক দই।
  • নানান রকম দেশীয় মৌসুমি ফল (তুলনামূলক কম শর্করাযুক্ত ও বেশি ভিটামিন সমৃদ্ধ)
  • খেজুর
  • অর্গানিক মধু

মিষ্টি আলু এই পর্যায়েও সকালে তেমন কোন ভারী খাবার খাবেন না। হলুদের চা, হরমােন বুস্টার, গ্রীন টি এসব খেতে পারেন। দুপুরে এবং রাতের খাবারে অল্প লাল চালের ভাত, বেশি করে শাক সবজী, পরিমিত মাছ অথবা মাংস, ডিম, সালাদ খাবেন। রাতের খাবার যথারীতি সন্ধ্যার মধ্যে খেয়ে নিবেন। যেদিন আপনি ফল খেতে চাইবেন সেদিন সন্ধ্যার খাবারের এক ঘন্টা পর ফল খাবেন। ফল খাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল ব্যায়াম, সুতরাং ফল খেতে হলে প্রতিদিন অবশ্যই ব্যায়াম করবেন।।

না খাওয়ার অভ্যাস (অটোফেজি) আবার কি?

যেহেতু ইতােমধ্যে আপনি আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন এবং এই প্রচেষ্টায় আপনি বেশ অনেকদিন রােজা (ড্রাই ফাস্টিং) রেখেছেন তাই হয়তাে এই পর্যায়ে রােজা রাখলে দুর্বল লাগতে পারে। তাই এই অবস্থায় আপনার শরীরের ভাষা বুঝে মাঝে মাঝে রােজা রাখতে পারেন। যেমন কোনদিন যদি একটু বেশি খাওয়া দাওয়া করেন তার পরে এক/দুই দিন রােজা রাখতে পারেন। অথ্যাৎ এই বিষয়টি আপনি নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে করবেন।

ভাল ঘুমের অভ্যাস কিভাবে করতে হয়?

JK Lifestyle এ ঘুমের ব্যাপারে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা সারাজীবন মেনে চলতেই অনুরােধ করবাে। এতে কোন পরিবর্তন হবে না।

দৈনন্দিন ব্যায়েমের অভ্যাস কিভাবে করতে হয়?

যারা প্রকৃতভাবে JK Lifestyle এর প্রতিটি বিষয় মেনে চলেছেন তারা অবশ্যই ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে উপকারের পাশাপাশি মনেও দারুন প্রশান্তি লাভ করেছেন। সুতরাং নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প আর কিছুই নেই। তাই অবশ্যই আপনি এটি নিয়িমিতভাবে চালিয়ে যাবেন। এখানে আরেকটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে তা হল মাসল বিল্ডিং করা। সাধারনত আমরা দেখে থাকি পুরুষেরা জিমনেশিয়ামে গিয়ে মাসল বিল্ডিং এর জন্য নানান রকম ব্যায়াম করে থাকেন। অপরদিকে নারীরা এই বিষয়ে তৎপর নন। আসলে নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই মাসল বিল্ডিং করা জরুরী তবে নারীরা পুরুষের মত করবেন না। কেননা নারী পুরুষের আলাদা আলাদা হরমােনের প্রভাবে শরীর গঠনও আলাদা। তাই নারীরা খুব বেশি ওজন নিয়ে মাসল বিল্ডিং এর ব্যায়াম না করে অল্প ওজন নিয়ে বাসায়ই নিয়মিত চর্চা করতে পারেন। এবং ধীরে ধীরে শক্তি বাড়ার সাথে সাথে ওজন বাড়িয়ে ব্যায়াম করবেন। স্বাভাবিক গতির হাটা, জগিং, ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামগুলাে খালি পেটেই করবেন আর খুব বেশি চাপের ব্যায়াম করলে তার দুই ঘন্টা আগে খাবার খেয়ে নিবেন। ব্যায়ামের সময় খেজুর ও পিংক সল্টের পানি পান করতে পারেন। মেইনটেইনিং এ এভাবে ব্যায়াম করলে আপনারা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অর্থাৎ দিনে দুই বেলা (দুপুর ও রাতে) ক্ষুধা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার খাবেন। রাতের খাবারের পরে কিছু ফল খেতে পারবেন এবং এর সাথে ঘরে বানানাে টক দই খেতে পারেন।

মানসিক প্রশান্তির চর্চা আবার কি?

আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই নানার রকম চ্যালেঞ্জ থাকে। চিন্তা, দুঃশ্চিন্তা, অবসন্নতা, নানান রকম বিপর্যয় জীবনে থাকবেই। তবুও বেঁচে থাকার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য সর্বদা ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। ধৈৰ্য্য ও প্রচেষ্টায় সফলতা আসে তাই বিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। শরীর ও মনের সুস্থতা একই সুতােয় গাঁথা। তাই শরীরের সুস্থতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেলে মনের সুস্থতাও মিলবে। আজীবনই আপনাকে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

Jk Lifestyle। ডায়বেটিস রােগী যেভাবে জেকে লাইফ স্টাইল ফলো করে সুস্থ হবেন এবং বিস্তারিত জানতে ডা. জাহাঙ্গীর কবির স্যারের PDF টি পড়ুন: ডাউনলোড

JK lifestyle pdf । Jk lifestyle Diet chart -ডা. জাহাঙ্গীর কবির