রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক ২০২২ । রিটার্ন দাখিলের নতুন শর্তে বিপাকে ব্যাংক এবং গ্রাহক

আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র আবশ্যকীয় (বাধ্যতামূলক) করার করানে এবার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ক্ষুদ্র ঋণ, ক্রেডিট কার্ডসহ সঞ্চয়পত্রে। এবারের বাজেটে ৩৮ প্রকার সেবা গ্রহণে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতদিন শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) জমা দিলেই বহু সেবা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন হতে বহু ক্ষেত্রে  রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।

যেসব সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা করতে হবে

যেসব সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা করতে হবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ৫ লক্ষ টাকার অধিক ঋণের জন্য আবেদন, ৫ লক্ষ টাকার অধিক সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ, কোনো কোম্পানির পরিচালক অথবা শেয়ারহোল্ডার হওয়ার ক্ষেত্রে। ব্যাংকগুলোতে বহু ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতা ঋণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে ক্রেডিট কার্ড এবং সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরাগণ আয়কর রিটার্ন না দিলে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে সেবা গ্রহন করতে পারছে না।

জরিমানা করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

ঋণের পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকার অধিক হলেই এখন হতে গ্রাহককে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। না হয় ব্যাংক ঋণ দিবে না। কারণ, রিটার্ন ব্যতিত ঋণ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)। এবারের বাজেটের অর্থবিলে এই ধরনের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অপরদিকে যারা পূর্বে ব্যাংক হতে এসব সেবা গ্রহন করেছেন তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মোবাইলফোনে বার্তা পাঠানো হচ্ছে। ফলে নানা ক্ষেত্রে যারা TIN গ্রহণ করেছেন, কিন্তু রিটার্ন দেয়নি, এখন তাদেরও রিটার্ন দিতে হবে।

ক্রেডিট কার্ডে কি আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কার্ডস মোহাম্মদ শফিউল আজম জানান, ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার জন্য রিটার্নধারী লোকই পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে টিআইএন আছে প্রায় ৬০ লক্ষ লোকের। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেন ২২ লক্ষ লোকের মতো। এতদিন টিআইএন থাকলেই ক্রেডিট কার্ড দেওয়া যেত। এখন যাচ্ছে না। এ কারণে ক্রেডিট কার্ডের বাজার ক্ষুদ্র হয়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে না দেওয়ার কোনো নির্দেশনা তাদের হাতে নেই। তিনি বলেন, বাজেটে ক্রেডিট কার্ডে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করার কারণে এ খাতে তাদের ক্রেডিট কার্ড বিক্রয় ও ব্যবসা প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। ব্যাংকের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকও। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষুদ্র ঋণ এবং কম আয়ের গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

ব্যাংকের আমানতেও বড় ধাক্কা

ব্যাংকাররা বলছেন, বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে বিভিন্ন উপায়ে কর আহরণের লক্ষ্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের আমানতেও বড় ধাক্কা লাগতে পারে। ব্যাংকের ব্যবসায়ও বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যক্ষ কর আদায় বৃদ্ধি করতে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। অনেকের করযোগ্য আয় আছে কিন্তু কর দিচ্ছে না। এই উদ্যোগের ফলে অনেকেই বাধ্যতামূলক ভাবে করের আওতায় চলে আসবেন।

রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ছোট অঙ্কের ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডে প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। যারা ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করেন, তারা ক্ষুদ্র ঋণ ও কার্ড নিতে পারতেন। এসব সেবা নিতে তারা কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেন, তবে রিটার্ন দেন না। এখন রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে এসব সেবায় প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসা খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম  জানান, দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তারা যদি ঋণ হতে বঞ্চিত হয় তবে কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে। ব্যাংক ঋণ দেবে—এটি ব্যাংকের কাজ। আর আয়কর দিচ্ছে কি না, এটি এনবিআরের কাজ। একটির সাথে আরেকটি লিংকআপ করা অযৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি। এদিকে বাজেটে ব্যাংকগুলোয় প্রাতিষ্ঠানিক যে আমানত আছে, তার সুদের উপর উৎস কর ১০ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি টাকার অধিক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক ৪০ হাজার টাকা হতে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে গ্রাহকরা বেশ চাপে আছেন বলে জানান ব্যাংকাররা।

সূত্র: ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *