ভ্যাট ও ট্যাক্স

আয়কর‌ বা ইনকাম ট্যাক্স আইন ২০২৩-২০২৪। সরকারি ভাবে কি ভাবে আয়কর‌ বা ইনকাম ট্যাক্স ধরা হয়?

আয়কর‌ বা ইনকাম ট্যাক্স আইন ২০২৩- ২০২৪

 

 

আয়কর‌ বা ইনকাম ট্যাক্স আইন কি?

ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর এর আইন পরিবর্তন হয়েছে তা আমরা সবাই অবগত। এই আইনের সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন তা হল এই আইনটি বাংলা ভাষায় করা হয়েছে যা আগে ইংরেজিতে ছিল। বর্তমান আইনের নাম হল- আয়কর আইন, ২০২৩

আয়কর আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে আয়কর ক্যাল্কুলেশনেও বিশাল পরিবর্তন এসেছে।

 

 

ব্যক্তিগত করদাতা

ব্যক্তিগত করদাতার ক্ষেত্রে আগের আইনের সাথে তুলনা করলে আয় নির্ণয়ে পরিবর্তন এসেছে,অব্যাহতি নির্ণয়ে পরিবর্তন এসেছে, ইনভেস্টমেন্টে পরিবর্তন এসেছে এবং রেয়াত নির্ণয়েও পরিবর্তন এসেছে। মোটাদাগে বলতে গেলে বেসিক ঠিক রেখে ম্যাকানিজম করে সবই পরিবর্তন এসেছে। ।

 

 

সরকারি ভাবে আয়কর‌ বা ইনকাম ট্যাক্স নতুন আইন ২০২৩ অনুসারে ব্যক্তিগত করদাতা

নতুন আইন অনুসারে একজন ব্যক্তিগত করদাতার আয়কর ক্যাল্কুলেশন কি ধরনের পরিবর্তন এসেছে তা সংক্ষেপে একটি উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা হল

 

যেমন-জনাব করিম সাহেব একটি স্বনামধন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। তার বয়স ৪৮ বছর। নিম্নে তা আয়ের বিবরণী তুলে ধরা হল- 

১. বেতন খাতে আয়

মূল বেতন ৬০০০০*১২=৭২০০০০ টাকা

বাড়ি ভাড়া ৩০০০০*১২=৩৬০০০০ টাকা

যাতায়াত ভাতা ৪০০০*১২=৪৮০০০ টাকা

মেডিকেল ভাতা ৬০০০*১২=৭২০০০ টাকা

উৎসব ভাতা ৬০০০০*২ = ১২০০০০ টাকা

রিক প্রভি ফান্ডে জমা ৬০০০*১২=৭২০০০ টাকা

প্রফিট বোনাস ১৩৮০০০ টাকা

আর্নলিভ এনকেশমেন্ট ৯০০০০ টাকা

সর্ব মোট বাৎসরিক আয় ১৬২০০০০ টাকা

 

২. ব্যাংক থেকে ইন্টারেস্ট ১২০০০০ টাকা যার উপর ব্যাংক উৎসে আয়কর কর্তন করেন ১২০০০ টাকা।

 

৩. সঞ্চয় পত্রের ইন্টারেস্ট পেয়েছে ১৫০০০০ টাকা

যার উপর ১০% হারে উৎসে আয়কর কেটে রেখেছেন।

 

৪. তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে কন্সাল্টেসি সেবা প্রদানের মাধ্যমে উপার্জন করেছেন ৩৬০০০০ টাকা, তার বিপরীতে ৩৬০০০ টাকা উৎসে আয়কর কর্তন করে পেমেন্ট করেন।

 

৫. শেয়ার থেকে আয় ১০০০০০ টাকা।

 

৬. ক্যাশ ডিভিডেন্ট থেকে আয় ১০০০০০ টাকা যার উপর উৎসে কর কর্তন ১০০০০ টাকা।

 

৭. তিনি এই বছরে ৮০০০০০ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন।

 

৮. প্রতি মাসে ডিপিএস বাবদ ১৫০০০ টাকা করে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত জমা করেন ১৮০০০০ টাকা।

 

৯. ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম দিয়েছেন ৫০০০০ টাকা যার পলিসি এমাউন্ট ৬০০০০০ টাকা।

 

১০. বেতনের বিপক্ষে উৎসে আয়কর কর্তন ৬৩৯০০ টাকা।

 

১১. তিনি পার্টনারে একটি ব্যবসায় করেন, যার নাম মেসার্স আদিবা এন্টারপ্রাইজ। সেখান থেকে ৫০০০০০ টাকা আয় করেন যার ট্যাক্স ফার্ম থেকে পরিশোধ করে দিয়েছেন।

 

১২. তার নামে একটি বাড়ি আছে, যেখান থেকে মাসে ৭৫০০০ টাকা করে ভাড়া পেয়েছেন ১২ মাসের, পৌর কর ২০০০০ টাকা এবং ভূমি উন্নয়ন কর দিয়েছেন ১০০০০ টাকা।

 

১৩. গ্রামের জমি থেকে ধান পেয়েছেন ৫০০ মন যা তিনি ৬০০ টাকা মনে বিক্র‍্য় করে দিয়েছেন। আবাদ করার জন্য যে পরিমান খরচ হয়েছে তার কোন হিসাব তিনি রাখেন নাই।

 

১৪. প্রভিডেন্ট ফান্ড এ তিনিও সমপরিমান অর্থ জমা করেন।

উক্ত লেনদেন থেকে তার নেট প্রদেয় কর এবং উক্ত রিটার্ন এর সাথে তার প্রদেয় কর কত টাকা?

 

 

আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী ব্যক্তি শ্রেণীর কর দাতার ২০২৩-২০২৪ 

 

প্রথম ৩,৫ ০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর শূন্য

পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ৫%

পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১০%

পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১৫%

পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ২০%

অবশিষ্ট আয়ের উপর ২৫%

 

কিছু শর্ত আছে যে,

১. মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের পুরুষ করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,০০,০০০ টাকা

২. তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,৭৫,০০০/- টাকা

৩. গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,৭৫,০০০/- টাকা

৪. কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান/পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০,০০০/- টাকা বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যেকোন একজন এ সুবিধা পাবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *