ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঝকঝকে সাদা দাঁত পাবার উপায়

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঝকঝকে সাদা দাঁত পাবার উপায় সুন্দর হাসি যেকোনো মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ীয়ে দিগুন করে দেয় । সুন্দর হাঁসির প্রতি আকৃষ্ট হয়না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুস্কর, আর সুন্দর হাসির বিনিময়ে যেকোনো কিছু সহজেই অর্জন করে ফেলা যায় এবং । কিন্তু এই সুন্দর হাঁসির জন্য অবশ্যই ঝকঝকে সাদা দাঁত থাকা প্রয়োজনও বটে । ঝকঝকে সাদা দাঁত মানেই মন ভোলানোর মত প্রশান্তির হাঁসি । আর কারো মন ভোলানো মানেই তার নিকট নিজেকে পছন্দের পাত্র হিসেবে স্থান করে নেওয়া ।  কিন্তু আমাদের অনেক বদ অভ্যাস এর কারণে দাঁতে হলদেভাব চলে আসে এবং দেখা দেয় অনেক রকম দাঁত জনিত সমস্যা । এসব হয় বিভিন্ন কারনে যেমন দাঁতের অযত্ন, অসেচতনতা, পানির আয়রন, মদ্যপান, ধুমপান, পান খাওয়া ইত্যাদি থেকে দাঁত হলদে হয়ে থাকে বা ঝকঝকে সাদা ভাব থাকে না এবং দাঁতকে নষ্ট করে ফেলে । 

দাঁত জনিত সমস্যা থেকে বাঁচতে ও ঝকঝকে সাদা দাঁত পেতে হলে দাঁতের প্রতি সচেতনতার পাশাপাশি প্রতি বছর ডেন্টিসের কাছে যাবার প্রয়োজন হয়ে থাকলেও আমরা বেশীরভাগ মানুষই এই বিষয়ের প্রতি উদাসীন । আর এসব কারণে আমরা প্রত্যক্ষভাবে কোনো ধরনের সমস্যা বুঝতে না পারলেও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সমস্যা বা রোগের সম্মুখীন হতে হয় আমাদেরকে ।  ঝকঝকে সাদা দাঁতের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো সচেতনতা এবং অধিক যত্ন । প্রতিদিন কিছু অভ্যাসের বিনিময়ে দাঁতের সৌন্দর্য্য ধরে রাখা সম্ভব ।

 তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু ঘরোয়া উপায় যেগুলোর মাধ্যমে নিজের সুস্থতা, দাঁতের সৌন্দর্য্য ও প্রাণবন্ত হাঁসি ফিরিয়ে আনতে অনেক বেশি উপকারে আসবে আমাদের সকলের ।  ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঝকঝকে সাদা দাঁত পাবার উপায়:-

ঘরোয়া পদ্ধতিতে রয়েছে ঝকঝকে সাদা দাঁত পাবার জন্য অনেক উপায় ।  

লেবু বা লেবুর রস

 লেবু একটি সহজলভ্য ফল এবং এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি । লেবু যেকোনো রকম দাগ দূর করতে অধিক বেশি কার্যকরী একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে প্রাচীন যুগ থেকেই ।  যেকোনো ধরনের ময়লা অথবা দাগ দূর করতে লেবু অনেক বেশি শক্তিশালী । এজন্য দাঁতে কোনো ধরনের দাগ থাকলে সেটি দূর করতেও লেবুকে খুব সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে ।  চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে, এক চিমটি লবণ ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এক সাথে মিশিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত অনেক বেশি পরিষ্কার হয় । এছাড়াও লেবুর রসের সাথে বেকিং সোডাও ব্যবহার করা যেতে পারে । এমনকি লেবুর খোসা ব্যবহার করে আপনি দাঁতে স্ক্রাবিং করতে পারেন ।  সাধারণত লেবুর রসের মিশ্রনকে টুথ পেস্ট এর মত করে ব্যবহার করতে পারেন সহজেই । অপরদিকে লেবুর খোসা অথবা লেবুর কেটে ছোট কোনো অংশ হাতে নিয়ে সেটি ৫- ৬ মিনিট দাঁতে ঘষতে থাকুন । এরপর কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন ভালভাবে । এছাড়াও টুথ ব্রাশে পেস্ট এর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন ।  তবে যেকোনো কাজেই সর্তক থাকতে হবে, লেবুতে রয়েছে এক প্রকার সাইট্রিক এসিড থাকে যা দাঁতের হলদে ভাব দূর করার পাশাপাশি কিছুটা ক্ষতিকরও । এজন্য এই এসিডিক উপাদান প্রয়োজনের বেশি বা অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না ।  

কমলার খোসা

লেবুর মতো কমলাও একটি সহজলভ্য এবং অত্যান্ত উপকারী ফল । ঝকঝকে সাদা দাঁত এর জন্য কমলার খোসাও জাদুর মতো কাজ করে থাকে ।  কমলা ব্যবহার করার পর সাধারণত আমরা সেই খোসা ফেলে দিই । কিন্তু এই খোসা ব্যবহার করে আপনি দাঁতের উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে পারেন নিমিশেই । কমলার খোসার ভিতরের যে সাদা অংশ তাতে রয়েছে অ্যালবেডোতে লিমোনিন । লিমোনিন হচ্ছে এমন একটি ন্যাচারাল সলভেন্ট ক্লিনার যা প্রকৃতপক্ষে দাঁত সাদা করতে বিভিন্ন পণ্যে বাণিজ্যকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।  কমলার খোসাতে লেবুর ন্যায় ক্ষতিকর এসিড খুবই কম এজন্য অনায়েসেই আপনি ঝকঝকে সাদা দাঁত পেতে এটি ব্যবহার করতে পারবেন । কমলার খোসা আপনি যেকোনো সময় ব্যবহার করতে পারবেন । খোসার সাদা অংশকে দাঁতে ভালোভাবে ঘষুন এবং কয়েক মিনিট ঘষার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন ।  

কলার খোসা 

লেবু বা কমলার ন্যায় কলার খোসাও দাঁত সাদা করায় অনেক বেশি কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে । লেবু, কমলা ও কলার খোসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ডি লিমোনিন রয়েছে । এই দুটি উপাদান দাঁতের হলুদ ভাব দূর করে দাঁতকে অনেক বেশি ঝকঝকে করে তুলতে সাহায্য করে ।  বিশেষ করে পরিপুষ্ট ও পাকা কলার খোসা ফেলে না দিয়ে কলার খোসার সাদা অংশের মাধ্যমে দাঁতকে প্রতিদিন কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ঘষুন ও তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন । এভাবে প্রতিদিন দাঁতের যত্ন নিতে পারলে সাত দিনের মধ্যেই আপনি কাঙ্খিত ফলাফল পেয়ে যাবেন আশা করা যায় ।  

বেকিং সোডা বা পাউডার 

বেকিং সোডা হচ্ছে এক প্রকার বায়ো কার্বোনেট । যা ঝকঝকে সাদা দাঁত তৈরি করতে অনেক বেশি কার্যকরী হিসেবে কাজ করে । জার্নাল অফ দ্যা আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন এর একটি গবেষণা থেকে প্রকাশ করা হয়েছে যে, দাঁত ঝকঝকে সাদা করার অন্যতম একটি উপায় বেকিং সোডা । এটি ঝকঝকে সাদা দাঁতের পাশাপাশি দাঁতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও লড়াই করে দাঁতকে রক্ষা করে ।  আমাদের প্রতিদিন ব্যবহৃত টুথ পেস্ট এর সাথে কিছু পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়ে দাঁত মাজলেই দাঁত পরিষ্কার ও সাদা হয়ে উঠবে এবং পেস্ট ব্যতীতও শুধুমাত্র সোডা ব্যবহার করেও দাঁত ব্রাশ করা যেতে পারে ।

তবে সেক্ষেত্রে, সোডা কিছুটা অমসৃণ হয়ে থাকে । এজন্য এটি ব্যবহার করার সময় সামান্য কিছু পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে পারেন কিংবা সাথে পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন  খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার বা ব্রাশ করুন  সাধারণত আমরা যখন কিছু খাই তখন খাবারের পর দাঁতের মধ্যে স্টেইন পড়ে । এটি স্বাভাবিকভাবেই আমরা বুঝতে পারি, খাবারের ছোট ছোট অংশ দাঁতের বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় আটকে যায় আর যার ফলেই দাঁত সহজে নষ্ট হয় কিংবা মুখ থেকে গন্ধ আসতে পারে ।  কাজেই সবচেয়ে ভালো অভ্যাস যেকোনো কিছু খাবারের পর ভালভাবে দাঁত পরিষ্কার করা । যদি সম্ভব হয় খাবারের কমপক্ষে ৩০- ৪০ মিনিট পর ব্রাশ করে ফেলুন, যদিও এটি সর্বদা সম্ভব হয়ে উঠে না । তবে সেক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব এটি মেনে চলার চেষ্টা করতে পারলে খুবই ভাল ফল পাওয়া যাবে । বিশেষ করে রাতে খাবারের পর ভালভাবে কুলি করে মুখ ও দাঁত পরিষ্কার করা অবশ্যই প্রয়োজন ।   

কিছু খাবার পরিহার করা প্রয়োজন 

 অনেকেই অতিরিক্ত পরিমাণে চা- কফি, পান ইত্যাদি খেয়ে থাকি আমরা । এছাড়াও অনেকেই আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে কোল- ড্রিংকস এ আসক্ত । এসকল খাবার যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে । এগুলো শুধুমাত্র দাঁতের যত্নের জন্য পরিহার নয় বরং সর্বদা সুস্থ থাকার জন্য এই ধরনের খাবার যতটুুকু সম্ভব পরিহার করা উচিত ।  অনেকে রয়েছেন যারা নিয়মিত ধুমপান, মদ্যপান ইত্যাদির সাথে জড়িত । এসবের কারণে আমাদের দাঁতের উপর এক ধরনের স্টেইন পড়ে যায় । প্রথমাবস্থায় দাঁত হলদে হয় এবং এরপর ধীরে ধীরে এটি আমাদের দাঁতকে নষ্ট করতে শুরু করে । সুতরাং ঝকঝকে সাদা দাঁত পেতে হলে অবশ্যই এই ধরনের ক্ষতিকর খাবার পরিহার করা অতিব জরুরি আমাদের জন্য ।

নারিকেল তেলের ব্যবহার 

ঝকঝকে সাদা দাঁত পেতে নারিকেল তেল ব্যবহার প্রচলন রয়েছে বহুদিন থেকে। বহুদিন থেকে বহু মানুষ দাঁতের উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে এই নারিকেল তেল ব্যবহার করে চলেছেন। নারিকেল তেলের পরিবর্তে জলপাই এর তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে।

নারিকেল তেল মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন খুব সহজেই। পাশাপাশি টুথব্রাশে পেস্ট এর সাথে কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও সুতি কাপড়ের মধ্যে কয়েক ফোঁটা তেল নিয়ে দাঁতের সাথে আস্তে আস্তে  ঘষতে পারেন।

অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের ব্যবহার 

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার শুধুমাত্র দাঁতের জন্যই নয় বরং স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক বেশি উপকারী উপাদান। বিশেষ করে এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এর গুণ দাঁতের হলদেভাব দূর করতে খুব সাহায্য করে ।

এটিকে আপনি মাউথওয়াশ হিসেবে  ব্যবহার করতে পারেন এটি দাঁতের জন্য খুব উপকারি। ২০০ মিলিমিটার পানির সাথে  দুই চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে সেটি দিয়ে ৩০ সেকেন্ড  ভালোভাবে কুলকুচি করুন।

তবে, খুব বেশি ভিনিগার ব্যবহার করা যাবে না পরিমিত পরিসরে এর ব্যবহার করতে হবে , অপরদিকে ৩০ সেকেন্ড এরও বেশি কুলি করা যাবে না। ভিনিগার এর মধ্যে  রয়েছে অ্যাসিডিক যা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *