জমির পর্চা বা রেকর্ড বা খতিয়ান সংশোধন ২০২৩ । বি আর এস রেকর্ড সংশোধন করতে যা করতে হবে
জমির রেকর্ড বা খতিয়ান সংশোধন করার নিয়ম 2022- আপনার জমির রেকর্ড বা খতিয়ানে অন্যের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এর সমাধান রয়েছে। আবার জমির পরিমাণ বা অন্য কোন তথ্য ভূল দেয়া আছে। কোন সমস্যা নেই। এরও সমাধান আছে। আজ আমরা আলোচনা করবো রেকর্ড বা খতিয়ান কীভাবে সংশোধন করা যায়।
রেকর্ড সংশোধন বলতে পর্চা বা খতিয়ান সংশোধনকে বোঝায়। খতিয়ান বা পর্চা রেকর্ড কারো নামে থাকলেই সে জমির মালিক হয়ে যায় না। সিএস রেকর্ড সংশোধন, এস.এ রেকর্ড সংশোধন, আর.এস রেকর্ড সংশোধন, বি.এস রেকর্ড সংশোধন, City জরিপ সংশোধনে যদি কোন ভুল পরিলক্ষিত হয় বা ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কেউ ভুল রেকর্ড তৈরি করে নেয় তবে তা কিভাবে সংশোধন করবেন সেটি নিয়েই আলোচনা করবো। ২০-২৫ বছর পর পর ভূমি জরিপের মাধ্যমে এসব রেকর্ড তৈরি করা হয় এগুলোতে ভুল পরিলক্ষিত হলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন করা যায়।
সূচীপত্রঃ
- ভূমি রেকর্ড কি?
- রেকর্ড বা খতিয়ানের ভূল সংশোধনের নিয়ম
- খতিয়ান সংশোধনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- রেকর্ড বা খতিয়ান সংশোধনে কতদিন লাগে
ভূমি রেকর্ড কি
খতিয়ান হচ্ছে দখলের প্রামাণ্য দলিল, মালিকানার দলিল নয়। সরেজমিনে জরিপ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ভূমি রেকর্ড তৈরির প্রস্ত্ততি আরম্ভ হয়। খসড়া গ্রাম (মৌজা) মানচিত্রই হলো ভূমি রেকর্ডের ভিত্তি। এই মৌজা ম্যাপ বা মানচিত্র প্রণয়নকে কিশ্তওয়ার বলা হয়। এই মানচিত্র সাধারণত ১৬ ইঞ্চি = ১ মাইল স্কেলে প্রণয়ন করা হয়। প্রথমে রেকর্ড তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় প্রকৃত অবস্থা দেখিয়ে প্লটের পর প্লট ভিত্তিতে। একে খানাপুরি বলা হয়। এতে জমির মালিকানা, আয়তন, জমির শ্রেণী, মালিকানায় অংশীদারির বিবরণ ও অবস্থা লিপিবদ্ধ থাকে। আর এগুলি খসড়া নামে একটি তালিকায় দেখানো হয়।
রেকর্ড বা খতিয়ানের ভূল সংশোধনের উপায়
১। ভূমি মন্ত্রনালয়ের ‘আইন শাখা-০১’ এর, গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখের নং- ৩১.০০.০০০০.০৪২.৬৭.০৩১.১১.৮৪১ স্মারকে প্রচারিত ‘পরিপত্রে’ চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড বা খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য ৩ ধরনের কর্তৃপক্ষের কথা বলা হয়েছে- সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্তৃক বিবেচনাযোগ্য করনিক ভুলের মধ্যে নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসুচিতে ভুল, ম্যাপের সংঙ্গে রেকর্ডের ভুল, জরিপকালে পিতার মৃত্যুর কারনে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হবার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুল বা অজ্ঞাত কারনে তা মুল প্রজা বা পিতার নামে রেকর্ড হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
একইভাবে প্রতারনামূলক লিখনের (Fraudulent Entry) মাধ্যমে সৃষ্ট চুড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদন অথবা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্মকর্তা প্রজাস্বত্ত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর উপবিধি (৪) অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
২। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ১৪৯ ধারার (৪) উপধারা মতে, Board of Land Administration যে কোন সময় যে কোন খতিয়ানে বা চুড়ান্তভাবে প্রকাশিত সেটেলমেন্ট রেন্ট-রোলে অন্তরভুক্ত যথার্থ ভুল (Bonafide Mistake) সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু Board of Land Administration বর্তমানে বিলুপ্ত বিধায় এ ক্ষমতা সরকারের পাশাপাশি ভূমি আপিল বোর্ডের রয়েছে।
৩। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সর্বশেষ জরিপে প্রকাশিত খতিয়ানের বিষয়ে যে কোন আদেশ প্রদানে এখতিয়ারবান। জরিপ পরবর্তী স্বত্বলিপি গেজেটে চুড়ান্ত প্রকাশনার পর কোন সংশোধনীর দাবী থাকলে তা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার্য” অর্থাৎ আপনার খতিয়ানে যে কোন ধরনের ভুল হোক না কেন, ভুলের ধরন অনুসারে উপরি উক্ত তিন ভাবেই তা সংশোধন সম্ভব।
খতিয়ান সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে:
- উক্ত জমিতে মালিকানার সকল দলিলপত্র (যেমন মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি, বায়া দলিল, পূর্বের খতিয়ানের কপি)
- চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত ভূল রেকর্ডের কপি
- আইডি কার্ডের ফটোকপি
- সংশোধনের জন্য আবেদনের সাথে ২০ টাকার কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে
রেকর্ড বা খতিয়ান সংশোধনে কত সময় লাগে
রেকর্ড বা খতিয়ান সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত ৩০-৩৫ দিন সময় লাগে।
সবশেষে আমরা বলতে পারি রেকর্ড বা খতিয়ানে যে কোন ধরনের ভূল হোক না কেন তা সংশোধন করা যায়।