মোনাজাত বিদআত । হাত তুলে মুনাজাত করা কি জায়েজ?
মোনাজাতের ব্যাপারটি বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষে হাদিসে আসলেও প্রতি ওয়াক্তে ফরজ নামাজের শেষে মোনাজাত করা হাদিস সিদ্ধ নয় – মোনাজাত কি বিদআত? এমন প্রশ্নের উত্তর খুজবো আমরা।
মোনাজাত কি বিদআত?– অমুক ছেলেটি এই স্কুলের ছাত্র নয়, সেটা প্রমাণ করার জন্য, স্কুলের খাতা দেখে তার রোল নম্বর বলো।লক্ষ্য করুন, যে ছেলেটি ওই স্কুলের ছাত্র নয়, তার রোল নম্বর ওই স্কুলের খাতায় থাকে না। সেই জিনিস খুঁজতে বলাটা বোকামি। হাদিসের বইতে, “অমুক কাজ বিদআত” এমন লেখা থাকে না। হাদিসের বইতে যে কাজটির কথা লেখা নেই, সেটা বিদআত। বিদআত হলো এমন একটি ইবাদত, যেটা ইসলামে নেই। বিদআত এমন একটি ইবাদত, যেটা কোরআন ও হাদিসে নেই। এক কথায়, বিদআত হলো “ভুয়া ইবাদত”।
আনাস রা.-এর বর্ণনা এসেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন এবং তাঁর সঙ্গে উপস্থিত সকলে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন।-সহীহ বুখারী
হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা দ্বারা বর্ণিত‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যে, একজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে তো আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন।’
হাদিসে কোথাও “সম্মিলিত মোনাজাত করিবে না” এমন কথা লেখা নেই। বরং রাসুল (স) সম্মিলিত মোনাজাত করেছেন, তেমন দৃষ্টান্ত আছে। সম্মিলিত মোনাজাত জিনিসটা নিষেধ নয়। বিশেষ প্রয়োজনে, বিশেষ উপলক্ষে, মাঝে মাঝে সম্মিলিত মোনাজাত করা যায়।
তাহলে, এর মধ্যে বিদআত কোথায়? বিদআত হয় আপনার চিন্তায়, বিদআত হয় আপনার কাজকর্মে। আপনি যদি মনে করেন, প্রতিবার নামাজের শেষে সম্মিলিত মোনাজাত করতে হয়, তাহলে সেটা বিদআত। আপনি যদি মনে করেন, সম্মিলিত মোনাজাত করলে, একাকী মোনাজাতের চেয়ে বেশি সওয়াব হয়, তাহলে সেটা বিদআত। আপনি যদি নিয়মিত সম্মিলিত মোনাজাত করেন, তাহলে সেটা বিদআত। এক কথায় – সম্মিলিত মোনাজাত বিদআত নয়। কিন্তু সেটাকে নিয়ম বানিয়ে ফেললে বিদআত হয়। সূত্র দেখুন
নবী কারিম সা: ঠিক কখন হাত তুলে মোনাজাত করতেন? / সম্মিলিতভাবে ঠিক কিভাবে মোনাজাত করা যাবে না
আজকের পোস্ট হতে জানতে পারবেন ঠিক কখন এবং কিভাবে মোনাজাত করা বিদআত।
Caption: Source of information
একাকী মোনাজাত করা যাবে । মোনাজাতের পক্ষে কি কি হাদিস আছে?
- হাদীস-১ قَالَ أَبُو مُوسَى دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ অর্থাৎ হযরত আবু মুসা আশআরী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আর মধ্যে দু’ হাত উপরে উঠিয়েছেন; এবং আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখেছি।
সূত্র: সহিহ বুখারী হাদিস: ৩৫৬৫ -
হাদিস-২ عن عبدالله بن عباس قال كانَ إذا دعا جعلَ باطنَ كفِّه إلى وجهِهِ অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সা. যখন দুআ করতেন, তখন হাতের তালু মুখের দিকে করতেন। সূত্র: মুসনাদে আহমাদ: ১৬৫৬৩ তাবরানী: ৬৬২৫ জামে সগীর: ৬৬৬৮ তাহযিবুল কামাল খ: ৫ পৃ: ৭৩
-
হাদিস-৩ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ عَبْدٍ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يَبْدُوَ إِبْطُهُ يَسْأَلُ اللَّهَ مَسْأَلَةً إِلاَّ آتَاهَا إِيَّاهُ مَا لَمْ يَعْجَلْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ عَجَلَتُهُ قَالَ يَقُولُ قَدْ سَأَلْتُ وَسَأَلْتُ وَلَمْ أُعْطَ شَيْئًا অর্থাৎ আবূ হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে সময় কোন বান্দা তার দুই হাত উপরের দিকে উত্তোলন করে, এমনকি তার বগল খুলে আল্লাহর নিকটে কিছু প্রার্থনা করে, তখন তিনি অবশ্যই তাকে তা দেন, যদি সে তাড়াহুড়া না করে। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার তাড়াহুড়া কি? তিনি বললেনঃ সে বলে, আমি তো প্রার্থনা করছি, আবারও প্রার্থনা করেছি (অধিকবার প্রার্থনা করছি), কিন্তু আমাকে কিছুই দান করা হয়নি। সূত্রঃ জামে তিরমিযি হাদিস: ৩৬০৪
- হাদিস-৪ عَنْ أَنَسً عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ অর্থ: আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ হাত এতটুকু তুলে দু‘আ করেছেন যে, আমি তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি।
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস: ১০৩০ মুসলিম:৮৯৭ আহমাদ: ১২০১৯ আবু দাউদ: ১১৭৫ নাসাঈ: ১৫২৮ - হাদিস-৫ عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ دَعَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِمَاءٍ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِي عَامِرٍ وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ فَقَالَ اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيرٍ مِنْ خَلْقِكَ مِنَ النَّاسِ অর্থ: হযরত আবূ মূসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার পানি আনিয়ে অযূ করলেন। তারপর উভয় হাত তুলে দু‘আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি ‘উবায়দ আবূ ‘আমরকে মাফ করে দিন। আমি তখন তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম। আরও দু‘আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি তাকে কিয়ামতের দিন আপনার সৃষ্ট অধিকাংশ অনেক লোকের উপর স্থান দান করুন
সূত্রঃ সহিহ বুখারী হাদিস: ৬৩৮৩ - হাদিস-৬ عَنْ سَلْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى حَيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي مِنْ عَبْدِهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا অর্থ: হযরত সালমান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের রব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। যখন কোন বান্দাহ হাত উঠিয়ে দু’আ করে, তখন তিনি তার খালি হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। সূত্র: সুনানে আবু দাউদ হাদিস:১৪৮৮ তিরমিযি: ৩৫৫৬ ইবনে হিব্বান: ৮৭৬
- হাদিস-৭ عَنِ الْفَضْلِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الصَّلاَةُ مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا إِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلاً بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا অর্থ: হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সালাত হ’ল দু’রাকাআত দু’রাকাআত করে। প্রতি দু’রাকাআতের পর রয়েছে তাশাহ্হুদ। সালাতে আছে খুশূ-খুযূ, আল্লাহর নিকটে বিনয় প্রকাশ এবং আহাজারি করা। ধীরস্থিরভাবে তা আদায় করবে। এতে আরো আছে, দু’আর সময় দুই হাত তোলা। দুই হাতের ভিতরের দিক তোমার চেহারার সামনের দিকে রেখে, তোমার প্রভূর পানে তুলে ধরে বলবেঃ হে আমার রব্ব। যদি এই কাজগুলি কেউ সালাতে না করে, তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ হবে। সূত্রঃ জামে তিরমিযী হাদিস: ৩৮৫ আহমাদ: ১৭৯৯ তুহফাতুল আহওয়াযী খ: ২ পৃ: ২০০
- হাদিস-৮ عَنْ الْحُسَيْنِ قَالَ کَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ یَرْفَعُ یَدَيْهِ إِذَا ابْتَھَلَ وَدَعَا کَمَا یَسْتَطْعِمُ الْمِسْکِيْنُ অর্থাৎ হযরত হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. যখন দুআ করতেন, তখন দু’হাত এমন ভাবে উত্তলন করতেন, যেমন অসহায় মিসকিন খাবারের জন্য হাত বাড়ায়। সূত্র: তারিখে বাগদাদ খ: ৮ পৃ: ৬৩ বি:দ্র: হাদিসটির উপর কালাম রয়েছে, কিন্তু তথাপি সমর্থক হিসাবে আনা হয়েছে।
- হাদিস-৯ عن أنس بن مالك قَالَ خرجتُ معَ النَّبيِّ صلّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ منَ البيتِ إلى المسجِدِ وقومٌ في المسجِدِ رافِعي أَيديهم يَدعونَ فقالَ ترى بأَيديهم ما أرى فقلتُ وما بأَيديهِم قالَ بأيديهِم نورٌ قُلتُ ادعُ اللَّهَ أن يُريَنيهِ فدعا فأرانيه فأسرَعَ فرفَعنا أيديَنا অর্থাৎ হযরত আনাস রা. খেতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন নবী সা. এর সাথে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের দিকে গেলাম। তখন কিছু লোক হাত তুলে আল্লাহর কাছে দুআ করছিলেন। তখন নবী সা. আমাকে বললেন, তুমি কি ঐ জিনিষটি দেখতে পাচ্ছো যা ওদের হাতের ভেতরে আছে? তখন আমি বললাম, কি আছে তাদের হাতের ভেতর? নবী সা. বললেন, (আমি ওদের হাতের ভেতর দেখছি) নূর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর কাছে একটু দুআ করেন যেন তিনি আমাকে ঐ নুর দেখিয়ে দেন। তিনি দুআ করলেন, ফলে আল্লাহ আমাকে ঐ নূর দেখালেন। (অতপর তিনি বললেন, হে আনাস, দ্রুত দেখো) অতপর আমি দ্রুত শেষ করলাম এবং আমরা তাঁদের সাথে আমাদের হাত উত্তলন করলাম। সূত্র: তারিখে কাবীর (বুখারী রহ.) খ: ৩ পৃ: ২০২ দালায়িলুন নাবুওয়াহ খ: ৬ পৃ: ১৯৭ কিতাবুদ দুআ (তাবরানী) হাদিস: ২০৬ সূত্র দেখুন
সম্মিলিতভাবে ফরজ নামাজের পর প্রতি ওয়াক্তে মোনাজাত কি বিদআত?
সম্মিলিত মোনাজাত আমভাবে বিদআত নয়; তবে খাস ভাবে ফরজ নামাজের পর পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা বিদআত।তাহলে এবার প্রশ্ন হচ্ছে কেন বিদআত? কারণ, রাসূল (স) ফরয নামাযের পর জিকির করেছেন, মুনাজাত করেন নি সবাইকে সাথে নিয়ে। যেমন আমাদের দেশে এখনও ফজর এবং আসরের পর এই সুন্নাহ অনুসরণ করা হয়। তাছাড়া, অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সম্মিলিত দোয়া বা মুনাজাত হাদীসে এসেছে। কিন্তু ফরয নামাজের পর সবাই মিলে মুনাজাত ধরেছেন এমন কোন হাদীস নেই।
কিন্তু প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করেছেন, বিদআত এর দলীল কি! এবার সাধারণভাবে একটু চিন্তা করুন। আমি বললাম, আপনি যেই বাসায় থাকেন সেই বাড়ির মালিক আমি না। এখন, আপনি কি আপনার কাছে বাড়ি যে আমার নয় , তার দলিল পেশ করতে বলবেন? বলবেন না।