জমির দলিল বড় না রেকর্ড বড় । দলিল বলতে আসলে কি কি কাগজপত্রকে বুঝানো হয়?

সম্পত্তি বা জমির দলিল বড় নাকি জমির রেকর্ড বড় এমন প্রশ্নের সহজ উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়, ক্ষেত্র বিশেষে দলিল এবং কোন অবস্থায় রেকর্ড বড়- দলিল থাকলে রেকর্ড সংশোধন করা যায়– এ নিয়ে আজ বিস্তারিত জানাবো-জমির রেকর্ড সংশোধন মামলা করার নিয়ম ২০২৪

দলিল ই কি বড় বিষয়? – জমির দলিল এবং রেকর্ড, দুটোই জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। জমির দলিল বলতে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সম্পন্ন লিখিত চুক্তি যা জমির মালিকানা হস্তান্তর করে। প্রস্তুত প্রক্রিয়া হল রেজিস্ট্রার অফিসে নিবন্ধন করা হয়। দলিল মালিকানার আইনি প্রমাণ। জমির দখল ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করে। জমি বন্ধক রাখা, বিক্রি, বা দান করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

জমির রেকর্ড বলতে সরকার কর্তৃক তৈরি করা নথি যাতে জমির মালিক, পরিমাণ, অবস্থান, খাজনা ইত্যাদি তথ্য থাকে। এটি প্রস্তুত প্রক্রিয়া হল ভূমি অফিস কর্তৃক তৈরি করা হয়। রেকর্ড মালিকানার সরকারি স্বীকৃতি। জমির খাজনা নির্ধারণ ও পরিশোধের ভিত্তি। বিরোধ নিষ্পত্তি ও জমি সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় এবং দলিল অনুসারে রেকর্ড সংশোধন করা যায়।

দলিল নাকি রেকর্ড কোনটি বড়? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর নেই। কারণ, দলিল ও রেকর্ড, উভয়ই জমির মালিকানার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। কিছু ক্ষেত্রে দলিল বড় ভূমিকা পালন করে। যখন জমি ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধক, বা দান করা হয়। আইনি বিরোধে জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য। অন্যদিকে, রেকর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বা বড় বলে বিবেচিত হয় যখন জমির খাজনা নির্ধারণ ও পরিশোধ করা হয়। সরকারি নিবন্ধন ও জমি সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়নে। দলিল হল মালিকানার আইনি নথি, যখন রেকর্ড হল সরকারি নিবন্ধন। উভয়ই জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য অপরিহার্য। কোনটি বড় তা নির্ভর করে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর। জমির দলিল ও রেকর্ডে তথ্যের অসঙ্গতি থাকলে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই, জমি কেনার সময় উভয় নথি যাচাই করে নেওয়া উচিত। আশা করি এই তথ্য আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে।

এসএ খতিয়ানে ভুল । রেকর্ড আছে দলিল নাই । জমির রেকর্ড যাচাই । জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায়

খতিয়ান সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে? যে জমির রেকর্ড সংশোধন করতে চান সেই জমির মালিকানার সকল দলিলপত্র (যেমন মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি, বায়া দলিল, পূর্বের খতিয়ানের কপি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।) চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত ভূল রেকর্ডের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ডের ফটোকপি।

জমির রেকর্ড পরিবর্তনের নিয়ম

ভূল ও সঠিক খতিয়ান/ পর্চা তুলতে হবে।

রেকর্ড বা খতিয়ানের ভুল সংশোধনের নিয়ম ২০২৪ । এসি ল্যান্ডের মাধ্যমেই কি জমির রেকর্ড সংশোধন করা যায়?

  1. ভূমি মন্ত্রনালয়ের ‘আইন শাখা-০১’ এর, গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখের নং- ৩১.০০.০০০০.০৪২.৬৭.০৩১.১১.৮৪১ স্মারকে প্রচারিত ‘পরিপত্রে’ চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড বা খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য ৩ ধরনের কর্তৃপক্ষের কথা বলা হয়েছে- সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্তৃক বিবেচনাযোগ্য করনিক ভুলের মধ্যে নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসুচিতে ভুল, ম্যাপের সংঙ্গে রেকর্ডের ভুল, জরিপকালে পিতার মৃত্যুর কারনে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হবার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুল বা অজ্ঞাত কারনে তা মুল প্রজা বা পিতার নামে রেকর্ড হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
  2. একইভাবে প্রতারনামূলক লিখনের (Fraudulent Entry) মাধ্যমে সৃষ্ট চুড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদন অথবা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্মকর্তা প্রজাস্বত্ত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর উপবিধি (৪) অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
  3. The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ১৪৯ ধারার (৪) উপধারা মতে, Board of Land Administration যে কোন সময় যে কোন খতিয়ানে বা চুড়ান্তভাবে প্রকাশিত সেটেলমেন্ট রেন্ট-রোলে অন্তরভুক্ত যথার্থ ভুল (Bonafide Mistake) সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু Board of Land Administration বর্তমানে বিলুপ্ত বিধায় এ ক্ষমতা সরকারের পাশাপাশি ভূমি আপিল বোর্ডের রয়েছে।
  4. ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সর্বশেষ জরিপে প্রকাশিত খতিয়ানের বিষয়ে যে কোন আদেশ প্রদানে এখতিয়ারবান। জরিপ পরবর্তী স্বত্বলিপি গেজেটে চুড়ান্ত প্রকাশনার পর কোন সংশোধনীর দাবী থাকলে তা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার্য” অর্থাৎ আপনার খতিয়ানে যে কোন ধরনের ভুল হোক না কেন, ভুলের ধরন অনুসারে উপরিউক্ত তিন ভাবেই তা সংশোধন সম্ভব।

জমির দলিল আছে রেকর্ড নাই করণীয় কি?

জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও রেকর্ড না থাকলে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। জমির মালিকানা প্রমাণে জটিলতা দলিল থাকলেও, সরকারী নিবন্ধন না থাকায় জমির মালিকানা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে, যদি জমির দখল নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। জমি বিক্রি, বন্ধক, বা দানে বাধা: ক্রেতা, ঋণদাতা, বা গ্রহীতা জমির সরকারী নিবন্ধন না থাকায় লেনদেনে অনীহা প্রকাশ করতে পারেন। সরকারি রেকর্ডে জমির তথ্য না থাকায় খাজনা নির্ধারণ ও পরিশোধে সমস্যা হতে পারে। জমির রেকর্ড না থাকায় বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা, যেমন কৃষি ঋণ, ভর্তুকি, ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। জমি ক্রয়ের পরই জমির রেকর্ড করুন: এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জমির রেকর্ড করুন। দলিলের সত্যায়িত কপি, জমির পরিমাপের নথি, খতিয়ান, আদায়ী রশিদ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করুন।  ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে রেকর্ড করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন। জমির দলিল ও রেকর্ড উভয়ই জমির মালিকানার গুরুত্বপূর্ণ নথি। দলিল থাকলেও রেকর্ড না থাকলে আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতায় পড়তে পারেন। তাই, জমি কেনার পর দ্রুততম সময়ে রেকর্ড করার ব্যবস্থা করা উচিত।

https://reportbd.net/%e0%a6%9c%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a1-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%a7%e0%a6%a8-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a8/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *