জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য কি ডকুমেন্ট লাগবে? – জন্ম নিবন্ধনে পিতা-মাতার নাম বা অন্য কোনো তথ্য সংশোধনের জন্য নিম্নেবর্ণিত তালিকা অনুসারে প্রমানক জমা দিতে হবে। প্রমানক জমার ক্ষেত্রে আপনি অনলাইন আবেদন করলে আবেদন শেষে প্রিন্ট কপি অথবা প্রথমত হার্ডকপি আবেদনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমানক যুক্ত করে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট তথ্য  প্রয়োজনীয় প্রমাণ 
পিতা-মাতার নাম বা অন্য কোনো তথ্য
  • পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
  • পিতা-মাতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • পিতা-মাতার মৃত্যু সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
নিজের নামের বানান অথবা জন্ম তারিখ
  • নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র
  • তার এসএসসি সার্টিফিকেট
  • তার পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • তার ইপিআই কার্ড
  • তিনি যেই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে জন্ম নিয়েছেন তার ছাড়পত্র
ঠিকানা পরিবর্তন (স্থায়ী)
  • এলাকার কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান এর প্রত্যয়নপত্র
  • স্থায়ী ঠিকানার হালনাগাদ কর পরিশোধের প্রমাণ
ঠিকানা পরিবর্তন (বর্তমান)
  • বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিলের কপি

বাংলাদেশে আলাদা ভাবে নাগরিক সনদের চল থাকলেও জন্ম সনদই কিন্তু প্রাথমিক ভাবে আপনার নাগরিকত্বকে প্রমাণ করে। অর্থাৎ আপনি যে বাংলাদেশে জন্মেছেন ও বাংলাদেশের নাগরিক, এর প্রথম প্রমাণটাই হলো জন্ম সনদ। একটি দেশের নাগরিক সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই নিজেকে সেই দেশের নাগরিক প্রমাণ করতে হয়। আর জাতীয় পরিচয় পত্র হাতে পাওয়ার আগ অবধি সেটি প্রমাণে জন্ম নিবন্ধন সনদই আপনার ভরসা। তাই জন্ম সনদ হওয়া উচিত নির্ভুল। কারণ ভুলকে ভুল হিসেবেই রেখে দিলে, জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই ভুল তথ্য বয়েই বেড়াতে হবে। সেজন্যই আজকে লেখাটিতে আলোচনা করা হয়েছে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার উপায়।

বিষয়  ফিসের হার (দেশে)  ফিসের হার (বিদেশে) 
জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে যেকোনো ব্যাক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন বিনা খরচে বিনা খরচে
জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর থেকে ৫ বছর সময় পর্যন্ত ২৫ টাকা ১ মার্কিন ডলার
জন্ম বা মৃত্যুর ৫ বছর পর কোনো ব্যাক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন ৫০ টাকা ১ মার্কিন ডলার
জন্ম তারিখ সংশোধন ১০০ টাকা ২ মার্কিন ডলার
জন্ম তারিখ ব্যতীত নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি অন্যান্য তথ্য সংশোধন ৫০ টাকা ১ মার্কিন ডলার
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মূলস সনদ ও তথ্য সংশোধনের পর দুই ভাষায় সনদের কপি সরবরাহ বিনা খরচে বিনা খরচে
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহ ৫০ টাকা ১ মার্কিন ডলার

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন । জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম ২০২২

ভুল এড়াতে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করুন অনলাইনে

Caption: Submit Correction Application by Pictures

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফরম পূরণ করবেন যেভাবে ।জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম ২০২২

  1. জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য https://bdris.gov.bd/br/correction এই লিংকে যান। কম্পিউটার হলে ভাল হয়, না হলে লিংকটিতে মোবাইল ফোন দিয়েও ঢুকতে পারবেন।

  2. তথ্য পূরণের জন্য দুটি স্থান থাকবে। সাধারণত এটি ব্যক্তিগত পরিচিতি নং যাকে ইংরেজিতে বলে “Personal Identification Number হিসেবে” থাকে। দ্বিতীয় ঘরটিতে আপনার জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে। এ সকল তথ্য সঠিক ভাবে দিয়ে হালকা নিল রঙের ‘অনুসন্ধান’ বাটনটিতে ক্লিক করুন।

  3. ‘অনুসন্ধান’ বাটনে ক্লিক করার পর জন্ম নিবন্ধনকারীর কিছু তথ্য ওয়েবসাইটে দেখা যাবে।  সব কিছু ঠিক থাকলে পাশে থাকা ‘নির্বাচন করুন’ বাটনটিতে ক্লিক করুন।
  4. “নির্বাচন করুন” ক্লিক করার পর ‘আপনি কি নিশ্চিত’ নামক একটি বার্তা ফুটে উঠবে। বার্তাটির নিচে নীল রঙের ‘কনফার্ম’ বাটনে ক্লিক করুন।

  5. ‘কনফার্ম’ বাটনে ক্লিক করার পর এই পেজটি আসবে। দেশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ’ কেই নির্ধারণ করুন। আবার বিদেশ থেকে করাতে চাইলে ঐ দেশের নাম উল্লেখ করুন। দেশের কার্যালয় ব্যবহার করতে চাইলে দেশের পরে পর্যায়ক্রমে বিভাগ, জেলা, সিটি কর্পোরেশন (City Corporation) / ক্যান্টনমেন্ট / উপজেলা এবং ওয়ার্ড বা অঞ্চল নির্ধারণ করতে হবে। এরপর ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

  6. পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর যেই পেজটি আসবে। এই পেজটিতেই জন্ম নিবন্ধন সনদের যে সকল সংশোধন সম্ভব তা হয়ে থাকে। একটি জন্ম নিবন্ধন সনদে অনেক ধরনেরই তথ্য থাকে। সংশোধন করতে চাইলে একটি একটি করে সংশোধন করা যায়। আপনি কোন তথ্যটি সংশোধন করবেন তা নির্ধারণ করতে উপরে বাম দিকে থাকা ‘বিষয়’ নামক ড্রপ-ডাউন মেনুতে ক্লিক করুন। মেনুতে ক্লিক করলেই অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন। যেমন নামের বানান, জন্ম তারিখ, পিতা মাতার কততম সন্তান, লিঙ্গ, পিতার নাম, মাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি।

  7. প্রথম ভুল নির্ধারণ করে সঠিক তথ্য ও কারণ দেওয়ার পরেই নিচে আরেকটি সবুজ রঙের বাটন ফুটে উঠবে। ‘আরো তথ্য সংযোজন করুন’ বাটনটিতে ক্লিক করলেই আপনি আরো তথ্য সংশোধন করতে পারবেন। আরো তথ্য ভুল থাকলে আবারো বাটনটি চেপে অন্য ভুল সংশোধন করতে হবে।
  8. ভুলক্রমে কোনো তথ্য সংশোধনের জন্য দিয়ে ফেললে বিষয়, চাহিত সংশোধিত তথ্য ও সংশোধনের কারণ এর পাশেই ‘Delete’ নামের একটি বাটন আছে। কোনো কারণে সংশোধিত তথ্যটি বাতিল করতে চাইলে ‘Delete’ বাটনে ক্লিক করলেই তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
  9. আবেদনের এই অংশে আপনাকে আরো কিছু তথ্য দিতে হবে যা আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা হিসেবে গণ্য হবে। তথ্যগুলো হলোঃ দেশ, বিভাগ, ডাকঘর (বাংলা ও ইংরেজিতে), গ্রাম / পাড়া / মহল্লা (বাংলা ও ইংরেজিতে), বাসা ও সড়ক, নাম ও নম্বর (বাংলা ও ইংরেজিতে), উল্লেখ্য যে দেশ ও বিভাগের নাম সাইটের ড্রপ-ডাউন মেনু থেকেই নির্ধারণ করে দিতে হবে।
  10. জন্মস্থানের ঠিকানা সঠিক ভাবে দেওয়ার পর জন্ম সনদের সাথে মিল রেখে বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানার ঘরগুলিও পূরণ করতে হবে।
  11. সকল তথ্য দেওয়ার পর এবার আবেদনকারীর তথ্য উল্লেখ করতে হবে। এই ধাপটিতে মোট ৪ ধরনের তথ্য দিতে হবে। জন্ম সনদের অধিকারির সাথে আবেদনকারীর সম্পর্ক, আবেদনকারীর নাম, আবেদনকারীর ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, সংশোধনের আবেদনকারী যদি জন্ম সনদের অধিকারী বা তার মা-বাবা বাদে অন্য কেউ হয়ে থাকেন তাহলে আরো কিছু তথ্যের প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে অবশ্যই তার নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ও জন্ম সনদের নম্বর প্রদান করতে হবে।
  12. জন্ম নিবন্ধন চাইলেই আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। আগের জন্ম সনদে যে আসলেই ভুল ছিল এবং আপনি যেই তথ্য দিচ্ছেন সেটিই সঠিক এমনটি প্রমাণ করতে কিছু কাগজপত্রের দরকার।
  13. তাই জন্ম সনদ সংশোধন করতে চাইলে প্রথমেই প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র গুলো যোগাড় করুন। অতঃপর প্রতিটি কাগজের স্ক্যান কপি তৈরি করুন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে কোনো স্ক্যানড ফাইলের আকারই যেন ৯৭৬ কিলোবাইটের বেশি না হয়। কারণ জন্ম সনদ সংশোধনের সার্ভার সর্বোচ্চ ৯৭৬ কিলোবাইটের ফাইল আপলোড করতে দেয়। সাইজ বা আকার এর চেয়ে বেশি হলে যেই দোকান থেকে করছেন সেখানে বলে কমিয়ে নিতে পারেন। আর নিজে স্ক্যান করলে ক্রপ করে বা অন্য কোনো উপায়ে আকার কমাতে পারেন।

  14. এবার প্রমাণ দাখিলের জন্য নিচের ছবির ন্যায় ‘সংযোজন’ বাটনটিতে ক্লিক করুন। সংযোজন বাটনে ক্লিক করলে আপনি আপনার ডিভাইস থেকে প্রয়োজনীয় ছবিটা (কাগজের স্ক্যানড কপি) আপলোড দিতে পারবেন। আপলোড দেওয়ার পরে আরেকটি ড্রপ-ডাউন মেনু দেখতে পারবেন যেখান থেকে আপনার আপলোড দেওয়া ছবিটা আসলে কি তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন।প্রমাণের ধরন নির্ধারণ করার পর আপনি ছবির ধরন ও ঠিক করে দিতে পারবেন। ‘Sub Type’ ড্রপ ডাউন মেনু থেকে ছবিটি কোন ধরনের ফাইল, অর্থাৎ JPJ, JPEJ, PNG ইত্যাদি ফাইলের ধরনও ঠিক করে দিতে পারবেন।

  15. প্রমাণের ধরন ও ফাইলের ধরন ঠিক করে দেওয়ার পরে ডান পাশে নীল রঙের ‘Start’ বাটনে ক্লিক করলেই ফাইলটি আপলোড হয়ে যাবে। আবার আপনি যদি ভুল ফাইল আপলোড করে থাকেন তাহলে হলুদ রঙের ‘Cancel’ বাটনে ক্লিক করলে এই ফাইলটি বাতিল হয়ে যাবে। তখন আবার নতুন করে ফাইল আপলোড করতে পারবেন। এছাড়াও একই সাথে একাধিক প্রমাণ আপলোড করতে চাইলে আবারো ‘সংযোজন’ বাটনে ক্লিক করলেই নতুন ফাইল আপলোড করতে পারবেন।

  16. এই ধাপে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ফি আপনি কিভাবে দিতে চান তাও নির্ধারণ করে নিতে হবে। এর মূলত দুটি উপায় আছে। প্রথমটি হলো ‘ফি আদায়’। এই উপায়ে আপনি জন্ম সংশোধন সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে তোলার সময় ফি পরিশোধ করবেন। এছাড়া আগে থেকেই ফি পরিশোধ করে রাখতে চাইলে ‘চালান এর মাধ্যমে’ অপশনটিতে ক্লিক করতে পারেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বাংক এর সেবা চালান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হবে। এবার সকল তথ্য ঠিক থাকা সাপেক্ষে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে দিন।
  17. ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করার পর আপনার আবেদনপত্রটি দাখিল হয়ে যাবে। পরবর্তী পেজে আপনার আবেদন পত্রের নম্বর ও কবে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় যাবেন সেই তারিখ দিয়ে দেওয়া হবে। এবার নিচের সবুজ ‘আবেদনপত্র প্রিন্ট’ বাটনে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে ফেলুন। প্রিন্টার না থাকলেও এই বাটনে চাপ দিন। আবেদন পত্রটি পিডিএফ (PDF) আকারে সংরক্ষিত হয়ে যাবে। পরে তা প্রিন্ট করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম ২০২২