তারাবীহ্ নামাজ কি? তারাবীহ্ নামাজ ৮ ,১২ এবং ২০ রাকাত কোনটার গুরুত্ব কোরআন ও হাদিসে

তারাবীহ্ নামাজ ৮ ,১২ এবং ২০ রাকাত কোনটার গুরুত্ব কোরআন ও হাদিসে

 

১। তারাবীহ্ নামাজ কি?

তারাবীহ্ শব্দটি আরবী অর্থ হলো আরাম করা,বিশ্রাম করা। রমজান মাসে ইশার ৪ রাকাআত ফরজ ও ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজের পর বেতের নামাজের আগে যে নামাজ পড়া হয় তাই তারাবীহ নামাজ।এবং তারাবীহ শব্দটি নির্গত হয়েছে রাহাতুন শব্দ থেকে। আর রাহাত অর্থ আরাম বা শান্তি অর্থাৎ তারাবীহ হলো আরামের নামাজ বা শান্তির নামাজ।

 

২। রমজানের ৪ রাকাআত নামাজ তারাবীহ পড়ে কি করতেন

মানুষ প্রতি ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করার পর আরাম গ্রহণ বা বিশ্রামের জন্য কিছু সময় বসতেন এবং তাসবিহ্ তাহলিল আদায় করতেন। কারণ এ নামাজের ক্বেরাত দীর্ঘ সময় করা হত। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ক্বেরাত পড়া হতো বিধায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে এ নামাজ আদায় করা হতো তাই এ নামাজ কে তারাবীহ নামাজ বলে অবিহিত করা হয়।‌তারাবীহ নামাজ ২ রাকাআত অথবা ৪ রাকাআত করে ইমামের সঙ্গে জামাআতে অথবা জামাআত ছাড়াও আদায় করা যায়। আর ২ রাকাআত করে নামাজ পড়া এবং ৪ রাকাআতের পর খানিকটা সময় বসেতাসবিহ-তাহলিল পাঠ করার কথা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইশার নামাজের পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত এ নামাজ আদায় করা যায়। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করে বলেছেন-

যে ব্যাক্তি রমজান মাসে সঠিক ঈমান নিয়ে সাওয়াবের নিয়তে রাতের নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অতিতের গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি ও মুসলিম)

 

৩। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তারাবীহ নামাজ কেমন ছিল

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তারাবীহ ছিল অতি দীর্ঘ। এমনকি কিয়াম, রুকু, সিজদা সবই ছিল অনেক লম্বা ও ধীরস্থির। হাদিসে এসেছে-

হজরত সাঈদ ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইমাম সাহেব তথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবীহতে শত শত আয়াত পড়তেন। ফলে সুদীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে আমরা লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।(মুয়াত্তা মুহাম্মদ)

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী যেহেতু রমজান মাসব্যাপী রাতের নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। আবার সুন্নাত হলো তারাবিহ নামাজের ক্বেরাত দীর্ঘ করা। তাই দীর্ঘ ক্বেরাতে ধীরস্থির ভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত তারাবিহ নামাজ আদায়ের পর আরাম গ্রহণ এবং তাসবিহ্ তাহলিল করা উত্তম।অপরদিকে শুদ্ধ অন্তকরনে একাগ্রচিত্তে স্বস্তির সাথে আদায়ের নামাজ হলো তারাবীহ। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরপর দুদিন একাকী তারাবি নামাজ পড়েছেন। সাথে শরীক ছিলেন সাহাবায়ে কেরামও। তৃতীয় কিংবা চতুর্থ দিন হুজুর আর হুজরা থেকে বের হননি। প্রিয় উম্মতের ওপর এটি আবার ফরজ হয়ে যায় কি না সে আশঙ্কায়। নববী ও সিদ্দিকী যুগ পেরিয়ে ওমরি শাসনামলের সূচনাকাল নাগাদ তারাবীহ নামাজের এ রীতিই (একা একা নামাজ আদায় করা) বহাল থাকে যথারীতি।

 

৪। ২০ রাকাত তারাবীহ

রমজানের কোনো এক রাতে উমর (রাঃ) মসজিদে নববীতে তাসরিফ নিয়ে যান এবং দেখতে পান যে, মসজিদের কোথাও একাকী নামাজ হচ্ছে। আবার কোথাও ছোট ছোট জামাত হচ্ছে। তিনি চিন্তা করলেন সব নামাজিকে এক ইমামের পেছনে একত্র করা উচিত। তখন সাহাবিদের ইজমা বা ঐকমত্যের আলোকে জামাতবদ্ধ ভাবে ২০ রাকাত তারাবীহের আদেশ জারি করেন এবং উভায় ইবনে কাব রা-কে ইমাম নিযুক্ত করেন। রমজানের আরেক রাতে বেরিয়ে দেখলেন, লোকরা সাহাবি উভায় ইবনে কা’ব রা-এর ইমামতিতে জামাতবদ্ধভাবে তারাবীহ পড়ছে। ফলে তিনি দারুণ খুশি হলেন এবং আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বললেন, বাহ বড় চমৎকার এ কাজটি হজরত উসমান (রাঃ)-এর যুগেও ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়া হতো।আগেই বলা হয়েছে যে তখন নামাজ এতই দীর্ঘ হতো যে, মুসল্লিরা ক্লান্ত হয়ে লাঠিতে ভর করতেন।

সাহাবা, তাবেঈন, তাবয়ে তাবেঈনের স্বর্ণযুগ পেরিয়ে দেশে দেশে কালে কালে শীর্ষস্থানীয় বুজুর্গ ওলামায়ে কেরাম তারাবীহ আদায় করেছেন এ পদ্ধতিতেই- ধীরে-সুস্থে আর শান্তশিষ্টে। কালজয়ী মনীষী হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ) রমজান কাটাতেন ভারতের থানা ভবনে। তারাবীহ নামাজের ইমামতি করতেন তিনি নিজেই। ১৫ রমজান নাগাদ সোয়া পারা, এরপর থেকে এক পারা করে পড়তেন প্রতিদিন। ফরজ নামাজে যেমন ধীরে ধীরে কেরাত পড়তেন তারাবীহতেও তা বজায় থাকত যথারীতি। কখনো কখনো দ্রুত পড়ার প্রয়োজন দেখা দিলেও ধীরে সুস্থে পড়ার সময় শব্দ উচ্চারণের যে মান ছিল তাই বিদ্যমান থাকত। প্রতি চার রাকাত অন্তর অন্তর বিশ্রামের সময় ২৫ বার দরুদ শরিফ পড়তেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ কালেও বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রে তারাবীহ হয় আস্তে। সুন্দর সুস্পষ্ট তেলাওয়াতে। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী দুই মসজিদ- মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে তারাবীহ হয় ফরজ নামাজের মতোই ধীরে ধীরে। সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। সিঙ্গাপুরে আট রাকাত তারাবিতে সময় যায় এক ঘণ্টা। মালয়েশিয়ায় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট। কেনিয়ায় প্রায় সব মসজিদেই ২০ রাকাতে দেড় কি সোয়া ঘণ্টা সময় লাগে।

 

৫। তারাবীহ মানে তাড়াতাড়ি ও দ্রুত পড়লে কি গুনাহ হয় এবং সমস্যা হয়

১. তারাবি অতি দ্রুত পড়লে কুরআনের অক্ষর ও শব্দের বিকৃতি ঘটে। ফলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যায়।

২. তেলাওয়াতেররূহ বা প্রাণশক্তি বিনষ্ট হয়ে যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *