যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন এর গুরুত্ব। জিলহজ্জ্ব মাসের ফজিলত এবং আমল গুলো কি কি?

জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ দিনের ফজিলত এবং আমল গুলো 

সূচীপত্র

 

যিলহজ্জ মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি মাস হয়ে থাকে যা ইসলামিক ক্যালেন্ডারে দ্বাদশ মাস হিসাবে গণ্য করা হয়। এই মাসে দুটি বড় ইবাদত প্রথমটি হলে হজ্জ, এটি মুসলিমদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। দ্বিতীয়টি হলে ঈদুল আযহা

 

১. জিলহজ্জ্ব মাস মানে কি

জিলহজ্জ্ব মাস মানে হজ্জের মাস।

হজ্জের তিনটি মাস

১.শাওয়াল

২. জিলকদ্ব

৩. জিলহজ্জ্ব ।

এর মধ্যে প্রধান মাস হলো জিলহজ্জ্ব মাস।

এই মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ এই ছয় দিনেই হজ্জের মূল কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়।

 

২.যিলহজ্ব মাস কবে থেকে শুরু হয়?

আজ ২৫শে যিলক্বদ বৃহস্পতিবার, চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে আগামী ২০ বা ২১ শে জুন পবিত্র যিলহজ্জ্ব মাস শুরু হবে এবং ২৯বা ৩০ শে জুন পবিত্র ঈদুল আযহা পালিত হবে ইন শা আল্লাহ। তাই কবে চাঁদ উঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।

রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় আর অন্য কোনো দিনের আমল নয়। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে সিয়াম পালন করো এবং অধিক পরিমানে তাসবীহ তাহলীল, যিকির আযকার , সুবহা-নাল্ল-হ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্ল-হ, আল্ল-হু আকবার, পাঠ করো। মুসনাদে আহমাদ- ৫৪৪৬

রাসূল ﷺ বলেন, যিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের প্রতিদিনের সিয়াম ১ বছরের সিয়াম সমতূল্য এবং প্রতিটি রাতের তাহাজ্জুদ লাইলাতুল কদরের তাহাজ্জুদের সমতূল্য। জামে তিরমিযী- ৭৫৮

 

৩. যিলহজ্ব মাসে সর্বমোট কয়টি রোজা রাখতে হবে?

সর্বমোট নয় দিনে নয়টি রোজা রাখতে হবে। সবগুলো রোজা রাখাই উত্তম। তবে সবগুলো রোজা রাখতে না পারলে সাধ্য মোতাবেক রোজাগুলো রাখার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তত শেষের দুইদিন অথবা শেষের একদিন রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে ইন শা আল্লাহ

রাসূল সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ

আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহ্‌র কাছে আশাবাদী যে, এতে তিনি পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। সহিহ মুসলিম হাদিস নং- ২৬৩৬

যাদের রমজানের কাযা রোজা বাকি রয়েছে, তারা প্রথমে কাযা রোজাগুলো রাখবেন। এরপরে শেষের একটি রোজা আরাফার রোজা হিসেবে রাখবেন।

৪. আরাফার রোজাটি কবে রাখতে হবে?

আরাফার রোজা সম্পর্কে হাদীসে পাকে ইয়াওমে আরাফাহ অর্থাৎ আরাফার দিনের কথা বলা হয়েছে। আর ইয়াওমে আরাফাহ হচ্ছে যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ। সুতরাং আরাফার রোজাটি রাখতে হবে যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে।

সৌদি আরবের একদিন পরে বাংলাদেশে ঈদ হয়। তাই মুহাক্কিক আলেমগনের ফতুয়া হচ্ছে, বাংলাদেশে আরাফার রোজা রাখতে হবে যিলহজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখ অর্থাৎ ঈদের আগের দিন। কারন রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভঙ্গ করো অর্থাৎ ঈদ করো। সহীহ বুখারী- ১৯০৯

৫. রোযা রাখার জন্য নিয়ত কিভাবে করতে হবে?

সাহরী খেয়ে মনে মনে স্মরণ করতে হবে যে, আমি যিলহজ্জ্ব মাসের নফল রোজা রাখলাম অথবা রোজা রাখার নিয়ত করলাম। এছাড়া আরবীতে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ত করার প্রয়োজন নেই।

৬.সাহরী না খেয়ে রোযা রাখা যাবে?

সাহরী খাওয়া সুন্নত এবং ফজিলতপূর্ণ একটি সওয়াবের কাজ। তাই সাহরী খেতে না পারলেও রোজা রাখার নিয়ত করে ঘুমালে কিংবা ঘুম থেকে উঠে নিয়ত করে নিলে রোজা রাখা যাবে, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না, বরং রোজা আদায় হয়ে যাবে।

তবে সাহরী না খাওয়ার কারনে সুন্নত আদায়ের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই সাহরীতে এক ঢোক পানি হলেও পান করা উচিত। আর রোজারত অবস্থায় ভুলক্রমে কিছু খেয়ে ফেললে এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

৭. ঈদের আগের দিন রোযা রাখা হারাম কেন?

বছরে ৫ দিন রোযা রাখা হারাম।

১. ঈদুল ফিতরের দিন এবং

২. ঈদুল আযহার প্রথম ৪ দিন।

 

অর্থাৎ যিলহজ্ব মাসের ১০,১১,১২,১৩ তারিখ রোজা রাখা হারাম। এছাড়া অন্য যেকোনো দিনই রোজা রাখা বৈধ তথা হালাল।

৮. যিনি কুরবানী করবেন না তিনিও কি রোযাগুলো রাখতে পারবেন?

জ্বী, এই রোযাগুলো হচ্ছে নফল। কুরবানী করা কিংবা না করার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই কুরবানী না করলেও রোযাগুলো রাখতে পারবেন ইন শা আল্লাহ।

৯. যারা কুরবানী করবেন তারা চুল নখ ইত্যাদি কবে কাটবেন?

যারা কুরবানী করবেন তাদের জন্য সুন্নত হচ্ছে, যিলহজ্ব মাস শুরু হওয়ার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত চুল, নখ, অবাঞ্চিত পশম কোনো কিছু না কাটা। তাই এই আমলটি করতে হলে যিলহজ্ব মাস শুরু হওয়ার পূর্বেই সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে ইন শা আল্লাহ।

 

১০. তাকবীরে তাশরীক কি?

তাকবীরে তাশরীক হল

اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أكْبَرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ،

وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ ﻭ ﻟِﻠّﻪ الحَمْدُ

আল্ল-হু আকবার আল্ল-হু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্ল-হু,

ওয়াল্ল-হু আকবার আল্ল-হু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ

 

১১. তাকবীরে তাশরিক কখন পাঠ করতে হবে?

প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষ সকলের উপর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব এবং একাধিকবার পাঠ করা মুস্তাহাব। পুরুষেরা উচ্চস্বরে এবং মহিলারা নিম্নস্বরে তাকবীরটি পাঠ করবেন।

 

১২. কোন ওয়াক্ত থেকে কোন ওয়াক্ত পর্যন্ত তাকবীরটি পাঠ করতে হবে?

০৯ যিলহজ্জ = ১.ফজর+যোহর+আসর+মাগরিব+ইশা,

১০ যিলহজ্জ = 

২. ফজর+যোহর+আসর+মাগরিব+ইশা,

১১ যিলহজ্জ = 

৩. ফজর+যোহর+আসর+মাগরিব+ইশা

১২ যিলহজ্জ = 

৪.ফজর+যোহর+আসর+মাগরিব+ইশা

১৩ যিলহজ্জ = ফজর+যোহর+আসর = ২৩ ওয়াক্ত

সর্বমোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর পুরুষেরা উচ্চস্বরে এবং মহিলারা নিম্নস্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করবেন

১৩. কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়া যাবে?

জ্বী, কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে কুরবানীর পশু কেনার পূর্বেই আকিকার নিয়ত করতে হবে। আর গরু কুরবানীর ক্ষেত্রে ছেলের জন্য ২ অংশ এবং মেয়ের জন্য ১ অংশ ধরতে হবে।

তবে আকিকার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তানের মঙ্গল কামনা করা। সন্তান জন্মের ৭ দিনের দিন আকিকা করা সুন্নত। আর যিনি কুরবানী করতে পারেন তিনি চাইলে একটু কষ্ট করে আলাদাভাবে আকিকাও করতে পারেন। তাই সুন্নত পদ্ধতি হলো ৭ দিনের দিন আলাদাভাবে গরু কিংবা ছাগলের মাধ্যমে , ছেলেদের জন্য দুইটি ছাগল এবং মেয়েদের জন্য একটি ছাগলের মাধ্যমে , আকিকা করা।

১৪. সাহরি ও ইফতারের সময়সূচী কোথায় পাবো?

নামাজ, রোজা, সাহরী ও ইফতারের সময়সূচী জানার জন্য মুসলিম ডে এবং মুসলিম বাংলা দুইটি এপ্স অনুসরণ করতে পারেন। এই এপ্সগুলোতে চাঁদ অনুযায়ী নিয়মিত নামাজ রোজার সময়সূচী জানিয়ে দেওয়া হয়।

১৫. যারা প্রবাসে থাকেন তারা কবে থেকে এই রোজাগুলো রাখবেন?

আপনারা যারা দেশের বাহিরে থাকেন, তারা সেই দেশের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে রোজাগুলো রাখবেন।

আমলের নিয়তে এবং দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে লিখাটি কপি করে ছবিটি সেভ করে নিজ নিজ আইডি, স্টোরি এবং গ্রুপগুলোতে পোস্ট করে দিবেন ইন শা আল্লাহ। এতে করে যতজন মানুষ আপনাদের উছিলায় আমলগুলো সম্পর্কে জেনে আমল করতে পারবে তাদের আমলের সম-পরিমান সওয়াব আপনাদের আমল নামাতেও লিপিবদ্ধ করা হতে থাকবে ইন শা আল্লাহ।

১৬. বছরের বারো মাসের কোন কোন মাস বিশেষ? 

বছরের বারো মাসের চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। এই চার মাসের অন্যতম হলো জিলহজ্জ্ব মাস। আল্লাহ্‌ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্‌র কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, যা আল্লাহ্‌র কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যেদিন আল্লাহ্‌ তাআলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।

সুরা তাওবাহ -৩

এই চার মাস হলো জিলকদ, জিলহজ্জ্ব, মহররম ও রজব।

 

১৭. হজ্জ পালন

যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন একজন মুসলিমের জন্য হজ্জ করা হয়ে থাকে। হজ্জ আল্লাহর নিকটে অত্যন্ত মুক্তিযোগ্য ইবাদত হয় এবং এর মাধ্যমে মুসলিমদের পুরস্কৃত হয়ে থাকে। হজ্জে অনেক পবিত্র স্থানগুলোতে হাজির হয়ে থাকা হয়, যেমন কাবা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *