সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের পূর্বানুমতির নিয়ম বাতিল ২০২২

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়ার নিয়মসংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা সংবিধানের কিছু কিছু অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় প্রত্যহার ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

২০১৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরি আইন সংযুক্তি  করা হয়। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে একই বছরের ১লা অক্টোবর থেকে আইনটি বলবৎ হয়।

সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধাসংক্রান্ত

এ জন্য সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধাসংক্রান্ত আইনের ৪১ (১) ধারাটি সংবিধানের কিছু কিছু অনুচ্ছেদের বিরোধী উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ির করা হয়।

সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারাটি কেন সংবিধানের কিছু কিছু অনুচ্ছেদের বিরোধী ঘোষণা করা হবে না

রিটের প্রারম্ভিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারাটি কেন সংবিধানের কিছু কিছু অনুচ্ছেদের বিরোধী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এ রুলের ওপর গত বুধবার শুনানি শেষ আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

আদালতে রিটের সমর্থনে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাঁকে সাহায্য করেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। দুদকের তরফে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে পূর্বানুমতি লাগবে না

রায়ের পরে মনজিল মোরসেদ জানান, ‘৪১ (১) ধারাটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রত্যাহার ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। যারফলে, ফৌজদারি অভিযোগে বর্ণিত সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে পূর্বানুমতি লাগবে না।’

সরকারি চাকরি আইনে ফৌজদারি অভিযোগে বর্ণিত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি-সংক্রান্ত আইনের ৪১ (১) ধারার ব্যাখ্যা, কোনো সরকারি কর্মচারীর কর্তব্য পালনের সাথে সম্পর্কের অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ার পূর্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার অথবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।

সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকই আইনের চোখে সমান

শুনানিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন , সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকই আইনের চোখে সমান। কেবলমাত্র সরকারি চাকরি আইনের ধারাটি বৈষম্যমূলক।

সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যেকোনো আইন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিলযোগ্য। সরকারি চাকরি আইন ৪১ (১) ধারা অনুযায়ী একই ধরনের বিশেষ সুযোগ দিয়ে আনা বৈষম্যমূলক বিধান রেখে ২০১৩ সালে দুদক আইনের ৩২ (ক) ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এ নিয়ে রিট হলে আইনটি বৈষম্যমূলক ঘোষণা করে হাইকোর্ট প্রত্যাহার করেছিলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়নি বলে শুনানিতে জকনান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

গতকাল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট জানিয়েছেন, সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের পূর্বে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান কি বৈষম্যমূলক নয়? সাধারণ জনগনের ক্ষেত্রে কী হয়? অভিযোগ পেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রত্যুত্তরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় জানান, এটি বৈষম্যমূলক নয়। কারন, সরকারি কর্মচারীরা নিজেরাই একটি শ্রেণি। এই শ্রেণির মাঝে কোনো বৈষম্য হচ্ছে না।

সূত্র: প্রথম আলো 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *