টাকা পাচার বাংলাদেশ ২০২২ । মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার
দেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তদন্তে নেমে ভয়ংকর তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID)। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত এক বছরে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার টাকার হিসাবে যার পরিমান দাড়ায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। যার কারনে সরকার সমপরিমাণ অর্থের রেমিট্যান্স বঞ্চিত হয়েছে। হুন্ডি বানিজ্য করে এমন ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) বিকাশ, নগদ, রকেট এবং উপায় এর মাধ্যমে বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল হুন্ডি বানিজ্য করতো।
পাঁচ হাজার এজেন্টের খোজ
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, দেশে ডলারের মূল্যে অস্থিরতা আরম্ভ হওয়ার পর তারা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান আরম্ভ করেন। সিআইডির সাইবার গোয়েন্দারা বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঁচ হাজার এজেন্টের খোজ পেয়েছেন। তারা এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি বানিজ্যের সাথে জড়িত। দলবদ্ধ এই চক্র হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। আবার বিদেশে বসাবাসরত প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করছে। এই ৫ হাজার এজেন্ট গত চার মাসে ২৫ হাজার কোটি ও গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
হুন্ডিচক্রের অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে ভাগ
সিআইডি প্রধান জানান, হুন্ডিচক্রের অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজটি করে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের নিকট হতে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে। তারপর দেশ হতে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী এবং তার সহকর্মী দেশীয় মুদ্রায় এই অর্থ এমএফএস এজেন্টকে দেয়। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর নিকট হতে পাওয়া এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। এসব চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএসের মাধ্যমে ক্যাশ ইন করে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। এমএফএস এজেন্টদের মাধ্যমে পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।
বিদেশি মুদ্রা পাচার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন
অতিরিক্ত আইজিপি জানান, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড দেশি এবং বিদেশি মুদ্রা পাচার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ২(শ) (১৪) ধারা অনুযায়ী অপরাধ। যা একই আইনের ৪(২)-এর ধারায় দণ্ডনীয়। এ বিষয়ে মামলা রেকর্ডসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তিনি জানান, আটক ১৬ জনের মধ্যে ছয়জন বিকাশ এজেন্ট, তিনজন বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার, তিনজন বিকাশের ডিএসএস, দুজন হুন্ডি এজেন্ট, একজন হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী ও একজন হুন্ডি পরিচালনাকারী। তাদের কাছ থেকে ১০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, ৪ সিমে ৩ কোটি ৪৬ লক্ষ ৪৭ হাজার ২২৯ ইলেকট্রনিক মানি এবং ৩৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ৪টি মামলা করেছে সিআইডি।
অবৈধ লেনদেনে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানিগুলো কতটা দোষী?
এ অবৈধ লেনদেনে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানিগুলো কতটা দোষী-এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়টা দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা এজেন্ট। তাই কোম্পানিগুলোর এজেন্ট নিয়োগে ও মনিটরিংয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। সিআইডি এ বিষয়ে কোম্পানিগুলোর সাথে আলোচনা করবে।
হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রতি কড়া হুশিয়ারি
সংবাদ সম্মেলনে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রতি কড়া হুশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি জানান, বুঝে অথবা না বুঝে বা কারও প্ররোচনায় যেভাবেই হোক, যারা অবৈধপথে টাকা পাঠিয়েছেন তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।