ইসলামিক কথা

Salary Prayer Rules । নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম দেখে নিন

দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত নামাজ আদায় করলেও অনেকে নামাজ কিভাবে পড়তে হয়-সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রাখি না – নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম দেখে নিন

সানা কি? শুধুমাত্র প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পূর্বে সানা পড়তে হয় ” সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। (তিরমিজি, আবু দাউদ মিশকাত)। অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই।” সানা পড়া শেষ হলে সূরা ফাতিহা পড়ুন এবং সাথে অন্য যে কোন সূরা পড়ুন।

রুকু থেকে দাড়িয়ে কি পড়তে হয়? রুকু থেকে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। রুকুতে থাকাকালীন সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম পড়ুন। এরপর তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর : ৭৪৭)। সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মধ্যে কপাল মাটিতে রাখুন। নিজের পেট রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখুন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৫)।সিজদায় কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)।

এরপর সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়ুন। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন। দ্বিতীয় সিজদায়ও কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়ুন। বিজোড় সংখ্যায় এর বেশিও পড়া যাবে। অতঃপর জমিনে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যান। এ পর্যন্ত প্রথম রাকাত সম্পন্ন হলো। এখন দ্বিতীয় রাকাত আরম্ভ হলো। এতে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না, আউজুবিল্লাহও পড়বেন না। তবে আগের মতো সুরা ফাতিহা ও সঙ্গে অন্য একটি সুরা পড়ে রুকু-সিজদা করবেন। দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাঁ পা বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যাবেন। তখন আপনার হাত থাকবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। (মুসলিম, হাদিস : ৯১২)

অতঃপর নিম্নের তাশাহহুদ পড়বেন (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৮৮)।  উচ্চারণ : ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যু হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’ তাশাহহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল উঁচু করে ইশারা করবেন। আর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুল নামিয়ে ফেলবেন। তবে তাশাহহুদের বাক্য ও আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে অন্য নিয়মও ইমামদের বক্তব্যে দেখা যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।

যদি দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজ হয়, যেমন—ফজরের নামাজ ইত্যাদি, তাহলে তাশাহহুদের পর নিম্নের দরুদ শরিফ পাঠ করবেন (মুসলিম, হাদিস : ৬১৩)। উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’ এরপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া পাঠ করবেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১/২৯৮)। যেমন—এই দোয়া পড়তে পারেন। এটাকে দোয়ায়ে মাসুরা বলা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৯)।

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওলা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’ অথবা এই দোয়া পড়বেন—উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আজাবান-নার।’ এরপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাবেন। সালাম ফেরানোর সময় আপনার পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করবেন। যদি নামাজ তিন রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—মাগরিবের নামাজ, তখন প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর আর কিছু পড়বেন না। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪)

তবে তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়বেন। আর নামাজ যদি চার রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—জোহর, আসর ও এশার নামাজ, তখন চতুর্থ রাকাতেও শুধু সুরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর প্রথম দুই রাকাতের মতো রুকু-সিজদা করে দুই রাকাত সম্পন্ন করে শেষ বৈঠকে বসবেন। সেখানে উল্লিখিত পদ্ধতিতে তাশাহহুদের পর দরুদ এবং এরপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফেরাবেন। সালাম ফেরানোর সাথে সাথে নামাজ শেষ।

একগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করতে হয়, কোনোভাবে অন্য মনস্ক হওয়া যাবে না / নামাজ পড়ার সময় দোয়া-দূরুদ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ

সুরা ফাতিহা শেষ হলে একটি সুরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয় পড়ুন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৯৫) । রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)।  রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)

Salary Prayer Rules । নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম দেখে নিন

Caption: Salat by image

সুন্নি হানাফি পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের নিয়ম। সুন্নী হানাফি নিয়ম দেখে নিব

  1. নামাজের প্রধান ধাপগুলোকে ‘রাকাত’ বলা হয়। নামাজ দুই বা তিন বা চার রাকাত হতে পারে। ইসলামের বিভিন্ন মাযহাবে নামাজ পড়ার রীতিতে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। তবে মূল আঙ্গিক অভিন্ন।
  2. প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামাজ শুরু করতে হয়। তারপর সানা পড়তে হয়। সানা কেবল প্রথম রাকাতে পাঠ করতে হয়। প্রতি রাকাতে প্রথমে সুরা ফাতিহা ও অপর একটি সুরা বা অংশ বিশেষ পাঠ করতে হয়। এরপর রুকু করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়।
  3. রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ছোটো একটা বিরতি দিয়ে সিজদা করতে হয়। সিজদা দুুইবার করতে হয়, আর দুটি সিজদার মাঝে ছোট্ট একটা বৈঠক করতে হয়। ঠিক একই ভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত সম্পূর্ণ করতে হয়। দুই রাকআত নামাজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতের দুই সিজদা সম্পূর্ণ করার বসে যথাক্রমে “আত্তাহিয়াতু (তাশাহুদ)” ও “দরূদ শরীফ” ও “দোয়া মাসুরা” পড়তে হয়। অতঃপর প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।
  4. তিন বা চার রাকাতের নামাজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে তাশাহুদ (“আত্তাহিয়াতু”) দোয়া পড়তে হয় এবং পাঠ শেষে দাঁড়িয়ে উঠে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত পড়তে হয়। শেষ রাকাতের দুই সিজদা সম্পূর্ণ করার বসে যথাক্রমে “আত্তাহিয়াতু (তাশাহুদ)” ও “দরূদ শরীফ”ও “দোয়া মাসুরা” পড়তে হয়। অতঃপর প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়।

নামাজ বা সালাত কেন আরবিতে পড়া হয়?

আহমেদ হুসাইন শরীফ তার “হোয়াই প্রে ইন এরাবিক” (নামাজ কেন আরবিতে পড়া হয়?) বইতে আরবিতে নামাজ পড়ার পেছনে যে সকল কারণ বলেছেন তা হল, আরবি হল একটি গভীর ও বিস্তৃত ভাষা, নামাজের জন্য একটি সাধারণ ও সার্বজনীন ভাষা,  (আরবির মাধ্যমে) ইসলামী ভ্রাতৃত্বে সংযোগ স্থাপন, কুরআন হল আল্লাহর সৃজনকর্ম, কুরআনের পূর্নাঙ্গ ও পরিপূর্ণ অনুবাদ করা অসম্ভব, কুরআনই একমাত্র (ঐশীভাবে) সংরক্ষিত ওহী, কুরআনের নিজস্ব ছন্দ রয়েছে, দোয়া এবং নামাজের পার্থক্য হলোঃ দোয়া হল আমন্ত্রণ বা মিনতি, যা ঐচ্ছিক, তাই তা শিথিল এবং তা যে কোন ভাষায় করা যায়, আর নামাজ হলো প্রার্থনা, যা বাধ্যতামূলক ও তার নীতিমালা কঠোর, এছাড়া জামাতে ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে মুসলিমদের সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত রাখারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে, একারণে নামাজ শুধু আরবিতে পড়তে হয়। আরবি নামাজ বুঝতে শেখা কঠিন কিছু নয় এবং তা সহজ। পরিশেষে তিনি বলেন, “এইভাবে আমরা দেখতে পাই যে, নামাজের মাধুর্য, মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতা মূল আরবীতে নামাজ পড়ার উপর নির্ভর করে; এবং যদি অনুবাদে নামাজ পড়া হয়, তবে কুরআনের সাহিত্যিক এবং শৈল্পিক মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে বাধ্য; এবং অনূদিত নামাজের ফলে সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব।

admin

আলামিন মিয়া, একজন ব্লগার, ডিজিটাল মার্কেটার, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার। ব্লগিংকরছি প্রায় ৭ বছর যাবৎ। বিভিন্ন অনলাইন সেবা হাতের কাছে পেতে নির্দেশনা ও পদ্ধতি গুলো ব্যাখ্যা করা হয় যা আপনি খুব সহজেই এই ওয়েবসাইট হতে পেতে পারেন। যদি অতিরিক্ত কোন তথ্য প্রয়োজন হয় বা পরামর্শ থাকে তবে মেইল করুন admin@tricksboss.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *