বাগেরহাট জেলার পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান এবং বাগেরহাট শহরকে মসজিদের শহর বলা হয় কেন?

বাগেরহাট শহরের পরিচয় এবং পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান গুলো কি কি? 

 

বাগেরহাট শহরকে জানা অজানা পরিচিত 

বাগেরহাট শহর বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা সদর নগরী। এটি বাগেরহাট জেলার প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এটি জামালপুর নদীর তীরে অবস্থিত এবং জামালপুর ব্রিজের দিকে অবস্থিত।ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে বাগেরহাট শহরকে বিশ্ব এতিহ্যের অংশ হিসাবে ঘোষনা করে।

বাগেরহাট শহরকে মসজিদের শহর বলা হয় কেন?

পুরো শহরজুরে রয়েছে ইসলামিক মসজিদ ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন যেমন ষাট গম্বুজ মসজিদ ,সোনা মসজিদ,সিংগাইর মসজিদ ,নয় গম্বুজ মসজিদ,দশ গম্বুজ মসজিদ   ইত্যাদি   এই জন্য বাগেরহাট শহরকে মসজিদের শহর বলা হয়

১৮৪২ সালে যশোর জেলার খুলনা মহকুমার অধীনে বাগেরহাট একটি থানা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কবি বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সুপারিশে ১৮৬৩ সালে একই জেলার অধীনে বাগেরহাট মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ২৩ ফেব্রয়ারি বাগেরহাট জেলায় রূপান্তরিত হয়।

৫০টিও বেশী স্থাপনা চিহ্নিত করে ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে বাগেরহাট শহরকে বিশ্ব এতিহ্যের অংশ হিসাবে ঘোষনা করে। এই স্থাপনাগুলির মধ্যে রয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদ ,সিংড়ো মসজিদ ,বিবি বেগনীর মসজিদ , চুনখোলা মসজিদ, খান জাহান এর মাজার ইত্যাদি। মধ্যযুগে এদেশে মুসলিম শাষনের স্বাক্ষর বহন করে এই শহরটি।

বাগেরহাট জেলার পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান গুলো

 

১. ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট

ষাট গম্বুজ মসজিদ ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে একটি এবং বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন আকর্ষণ । এটি সুলতানি আমলের অন্যতম বৃহত্তম ঐতিহাসিক মসজিদ। খান জাহান আলী বর্তমান বাগেরহাট শহর থেকে তিন মাইল পশ্চিমে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ষাট গম্বুজ মসজিদটি সাধারণত শায়ত গামবুজ মসজিদ নামে পরিচিত, যা সুলতানি আমল থেকেই এই দেশের বৃহত্তম মসজিদ। এটি সমগ্র ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

ষাট গম্বুজ মসজিদে অবস্থান খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে। এই মসজিদের আয়তন ১৬০ ফুট দীর্ঘ ও ১০৮ ফুট প্রশস্ত। তুঘলক স্টাইলের জন্য এটি আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে।এখানে একটি জাদুঘর যেখানে বহু কালীন ইসলামী সংস্কৃতি এবং প্রাচীন কালের অনেক ফলক রয়েছে। বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে।

মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু। ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১ টি, সাত লাইনে ১১ টি করে ৭৭ টি এবং চার কোনায় ৪ টি মোট ৮১ টি। কালের বিবর্তনে লোকমুখে ৬০ গম্বুজ বলতে বলতে ষাট গম্বুজ নামকরণ হয়ে যায়, সেই থেকে ষাট গম্বুজ নামে পরিচিত।

২. সোনা মসজিদ বাগেরহাট

সোনা মসজিদ বাগেরহাট জেলার একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি বাংলাদেশের বাগেরহাট শহরে অবস্থিত। এই মসজিদটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। সোনা মসজিদ একটি প্রাচীন মসজিদ যা সন্ধান করা হয়েছে বাগেরহাটের ময়দানে। এটি বাংলাদেশের সেরা প্রমুখ মসজিদগুলির একটি।

এই মসজিদটি প্রাচীন মুগল সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর শাসনামলে নির্মিত হয়। সোনা মসজিদের নামটি মসজিদের মহলের সোনার প্রস্থ থেকে এসেছে, যা এই মসজিদের আকারে অভিব্যক্ত হয়। এই মসজিদে উচ্চতা, প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প, এবং মুগল শাসনামলের সুন্দর কার্যকরীতা বিশেষ ভাবে প্রশংসিত হয়। মসজিদের গভীর শিং এবং বারোয়ারি সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বারগুলি রয়েছে।

সোনা মসজিদ বাগেরহাট জেলার একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি অবস্থিত বাংলাদেশের বাগেরহাট শহরের ময়দানে। এই মসজিদটি প্রাচীন সময়ে নির্মিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় গণ্য একটি স্থান। সোনা মসজিদ বাগেরহাটের অন্যতম প্রাচীন ও বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে গণ্য। এই মসজিদটি মুগল সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর শাসনামলে নির্মিত হয়েছে। মসজিদের নামটি মসজিদের মহলের সোনার প্রস্থের উপর ভিত্তি করে যার কারণে মসজিদটি সোনার রং ধারণ করে।

সোনা মসজিদের প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প, সুন্দর কার্যকরীতা ও ঐতিহ্যবাহী শিংসহ একটি আদর্শ মাসজিদ হিসাবে বিশ্বাস করা হয়।

৩. সিংগাইর মসজিদ বাগেরহাট

সিংগাইর মসজিদ বাগেরহাট বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি সিংগাইর উপজেলার চৌধুরি গ্রামে অবস্থিত। এটি বাগেরহাট সিটি থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

এই মসজিদটি বাংলাদেশের সিংগাইর উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ হিসাবে পরিচিত। এর নির্মাণ সময়ে প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক এখানে রাজমহলের দলিল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই মসজিদের নির্মাণ কার্য সম্পন্ন হয়েছিল মুগল সুলতান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ শাহ এবং তিনি এখানে নামযুদ্ধ করেছিলেন। 

৪. নয় গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট 

নয় গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট একটি ঐতিহাসিক মসজিদ যা বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার ভর্তা উপজেলার বাগেরহাট শহরে অবস্থিত। এটি ইসলামিক স্থাপত্যের একটি উদাহরণ এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।

নয় গম্বুজ মসজিদটি মুগল সাম্রাজ্যের কালে নির্মিত হয়েছে, যা প্রায় ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মসজিদটি বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থাপত্য সৃষ্টির একটি উদাহরণ হিসাবে বিবেচিত হয়।

নয় গম্বুজ মসজিদের নাম এর মতোই, এই মসজিদে সুমধুর বিভিন্ন তালা থাকে, মোট নয়টি গম্বুজ বা বিপুল মসজিদের কারণে এই মসজিদটিকে নয় গম্বুজ বলা হয়েছে। এটি মাটি ও বালু দ্বারা নির্মিত হয়েছে এবং নগরসেতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত।

৫. খান জাহানআলীর মাজার বাগেরহাট

খান জাহান আলীর মাজার বাগেরহাট বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার বাগেরহাট উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্মারক। এটি খান জাহান আলী এবং তার পরিবারের বাসস্থান হতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খান জাহান আলী একজন বিখ্যাত মুগল সাম্রাজ্যের সম্রাট এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।

মাজারটি একটি সুন্দর স্মারক স্থাপনা যা সম্পূর্ণ মার্বেল থেকে তৈরি। এটি বাগেরহাট উপজেলার বাগেরহাট কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত। মাজারটি প্রধানতঃ মধ্যম আয়তনের একটি বিন্যাসযুক্ত গম্বুজদার স্টাইলে নির্মিত। এর উপরে সুন্দর মুক্তায়িত ছাদ আছে এবং ছাদটির উপরে একটি গোমটির মতো আলোকপথ থাকে। মাজারে আরামদায়ক আরেকটি স্মারক আছে যা খান জাহান আলী ও তার কুটুমবৃন্দের কবর অবস্থিত।

৬.বাগেরহাট জাদুঘর

বাগেরহাট জাদুঘর বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার বাগেরহাট শহরে অবস্থিত একটি পর্যটন স্পট। এটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর হিসাবে পরিচিত। জাদুঘরটি স্থানীয় শিল্প ও প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে রয়েছে।

বাগেরহাট জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় বিভিন্ন জাদুর প্রকার, মানচিত্রিক জাদু, জিনিসপত্র জাদু, পান্ডওয়ালা জাদু, নাচ গান জাদু ইত্যাদি। পরিদর্শকরা এখানে বিভিন্ন আকর্ষণীয় জাদুর প্রদর্শনী দেখতে পারেন। আরও একটি বিশেষ ব্যাপার হল পরিদর্শকরা নিজেদেরকে সম্পূর্ণ মুক্ত ভাবে জাদুর জগতে আনতে পারেন, যাতে তারা নিজেদের মনে প্রাণে একটি স্বপ্নজগতে পোয়ার মত অনুভব করতে পারেন।

৭. সুন্দরবন বাগেরহাট 

সুন্দরবন বাগেরহাট বাংলাদেশের একটি প্রশিদ্ধ প্রাকৃতিক উদ্যান। এটি বাগেরহাট জেলার শিয়ালদহ উপজেলায় অবস্থিত। সুন্দরবন বাংলাদেশের বৃহত্তম মঙ্গল মহাকার্ষ এবং এশিয়ার একটি বিশেষ জাতীয় উদ্যান।

এই বাগানটি প্রাকৃতিক মন্দির হিসাবে পরিচিত এবং বাংলাদেশের অন্যতম বিপণী প্রয়াত্তসম্পন্ন অর্ধ-উদ্যান। এখানে সময়কে মিস্তি করে দেয় নিশ্চিত চতুর্দিকে মাতালো নদী, অনেক গাছ ফলমূলের জাত এবং বিভিন্ন প্রাণী সম্প্রদায়ের জন্য একটি আদর্শ বাসভূমি রয়েছে। এখানে সবুজ ঘাস ক্ষেত, বনপথ, মহিষবাগান, তালের পানির মাঠ, সাপলার তলায় গোসাপ পাখির মন্দির ইত্যাদি দেখা যায়।

এছাড়া বাগেরহাট জেলার অন্যান্য ভ্রমণের দর্শনীয় স্থানগুলো রয়েছে সে গুলো হল

 

১. সাবেকডাঙ্গা পূরাকীর্তি 

২. জিন্দাপীর মসজিদ

৩. অযোধ্যা মঠ 

৪. বাগেরহাট জাদুঘর

৫. দশ গম্বুজ মসজিদ 

৬ . করমজল (সুন্দরবন)

৭. মংলা বন্দর

৮. রনবিজয়পুর মসজিদ

৯. চুনাখোলা মসজিদ

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *