হাদিসের আলোকে বিতরের নামাজ

বিতর আরবি শব্দ ‘আল-বিতরু’ থেকে এর উৎপত্তি। বিতর এর শাব্দিক অর্থ হলো বেজোড়। এই নামাজকে বিতর বলার কারণও এটি, কেননা বিতর নামাজ বেজোড়। বর্ণনাভেদে বিতর নামাজ তিন বা এক রাকাত। আজকের এই আলোচনায় আমরা জানতে চলেছি বিতর নামাজে ফজিলত, বিতর মূলত কত রাকাত এবং বিরত নামাজের নিয়ম

বিতর নামাজের ফজিলত

বিতর নামাজ পড়া ফরজের মতো আবশ্যক না হলেও বিতর ফজিলতপূর্ণ একটি নামাজ। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত- হজরত খারেজা ইবনে হুজাফাতুল আদাভি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন ‘মহা মহীয়ান আল্লাহ তোমাদেরকে একটি অতিরিক্ত নামাজ দিয়েছেন, সেটা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম। তা হলো বিতর। তোমাদের জন্য এ নামাজ আদায়ের সময় হচ্ছে ইশার সালাতের পর থেকে ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসতাদরাকে হাকেম)

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, বিতরের নামাজ তোমাদের ফরজ নামাজসমূহের মতো অত্যাবশ্যকীয় (ফরজ) নামাজ নয়। বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এ নামাজ) তোমাদের জন্য সুন্নাতরূপে প্রবর্তন করেছেন। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- ‘হে আহলে কুরআন! তোমরা বিতর পড়ো; কারণ আল্লাহ তাআলা বিতর (বেজোড়), তিনি বিতর পছন্দ করেন।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)। সুতরাং উক্ত হাদিস থেকে জানা যাচ্ছে যে বিতর সালাত স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার কাছেও অনেক পছন্দের। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাতের অনুসরণে বিতর নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন।

বিতর নামাজ কত রাকাত

আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? জবাবে তিনি বলেন, রমজানে এবং রমজানের বাইরে রাসুল (সা.) ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কোরো না! এরপর আরো চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহিহ বুখারি : ১/১৫৪, হাদিস ১১৪৭; সহিহ মুসলিম : ১/২৫৪, হাদিস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮, হাদিস ১৬৯৭)

সাদ ইবনে হিশাম (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন, রাসুল (সা.) বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। (সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮; হাদিস ১৬৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৪/৪৯৪, হাদিস ৬৯১২)। ইমাম হাকেম (রহ.) হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ।

বিতর নামাজের নিয়ম

বিতর নামাজ প্রায় অন্য ফরজ নামাজের মতো। তবে নিয়মের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও খুবেই সহজ। সে ক্ষেত্রে দুই রাকাত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠকে বসবে এবং তাশাহহুদ পড়বেন। কিন্তু সালাম ফেরাবেন না। এরপর তৃতীয় রাকাত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলাবেন। কিরাত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির বলে দুহাত কান পর্যন্ত উঠাবেন। এবং তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাঁধবেন। তারপর নিঃশব্দে (অনুচ্চ স্বরে) দোয়া কুনুত পড়বেন। দোয়া কুনুত পড়ে আগের মতো রুকু-সিজদা করবেন। তারপর শেষ তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন। বিতরের নামাজের এই পদ্ধতি বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এবং সাহাবিদের আমলের মাধ্যমে সুপ্রমাণিত।

ইশার পর থেকে ফজরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে বিতর নামাজ পড়া উত্তম। কেননা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বিতর নামাজ পড়তেন। বিতর নামাজ (ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নাতে মুয়াক্কাদা) নিয়ে কোনো বিতর্ক নয়। বরং প্রিয় নবির আমল হিসেবে সবারই বিতর নামাজ পড়া উচিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাতের অনুসরণে বিতর নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *