রিজিক বৃদ্ধি ও বরকতের আমল । রিজিক বৃদ্ধির ১০ টি আমল

বরকত শব্দটি আমাদের খুবই পরিচিত। বরকত বলা হয় আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে অল্পতে অধিক হওয়া। ঘরে-বাইরে, কাজেকর্মে এমনকি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের কামনা থাকে এই বরকত। প্রিয় নবীজি (সা.)-ও অনেক ক্ষেত্রে নিজের জন্য বরকত লাভের দোয়া করেছেন, পাশাপাশি উম্মতকেও প্রতিটি কাজে বরকত লাভের বিভিন্ন আমল শিখিয়েছেন। আজকের লেখায় কোরআন ও হাদিসে আলোকে বরকত লাভের জন্য রাসূল (সাঃ) এর শেখানো কিছু আমল তুলে ধরা হলো-

সততার সাথে ব্যবসা করা-

সততার সাথে ব্যবসা করা ইসলামের দৃষ্টিতে ইবাদত। যারা ব্যবসায় সততা বজায় রাখে মহান আল্লাহ তাদের বরকত দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের এখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়। (বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)। এ ছাড়াও সৎ ব্যবসায়ী দের জন্য রয়েছে আখিরাতে বিশেষ পুরষ্কার।

ভোর সকালে কাজ শুরু করা

রাতের বিশ্রাম শেষে ভোর সকালে মানুষের দেহ-মন সতেজ থাকে, উদ্যমতা থাকে। তা ছাড়া এ সময় কাজে বরকত লাভের কথা হাদিস শরিফেও এসেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ তা ছাড়া তিনি যখন কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করতেন তখন দিনের প্রথম ভাগেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তাঁর পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথম ভাগে (ভোরে) পাঠাতেন, ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারীও হয়েছিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬০৬)

তওবা-ইসতেগফার করা-

অধিক পরিমাণ এর ইসতেগফার পাঠ করলে আল্লাহ আমাদের সংকট দূর করেন এবং রিজিকে বরকত দান করেন। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “যারা বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করে; তাদের সামনে যত সংকটই (অভাব) থাকুক না কেন, মহান আল্লাহ তাআলা তা সমাধান করে দেন।” (মুসতাদরেকে হাকেম)

নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা-

নিয়মিত কোরআনের তিলাওয়াত বান্দার জীবনকে বরকত ময় করে তুলে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ লক্ষ করে এবং বুদ্ধিমানরা যেন তা অনুধাবন করে।’ (সুরা : সদ, আয়াত : ২৯)। অর্থাৎ একনিষ্ঠতার সঙ্গে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করলে সব কাজে বরকত হয়। তাই বরকত লাভে কোরআন তিলাওয়াতের বিকল্প নেই।

আত্মীয়দের সাথে সু-সম্পর্ক রক্ষা করা –

আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখলে আল্লাহ তাআলা জীবনে ও রিজিকে বরকত দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে। (বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)। ঠিক একই সাথে যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর জাহান্নামের  হুশিয়ারি।

সদকা করা-

রিজিকে বরকত বৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষ আমল হলো দান করা। দান করলে রিজিকে বরকত আসে। বিশেষত গোপনে সদকা করলে অধিক ফায়দা হয়। সদকা দ্বারা আল্লাহতায়ালার ক্রোধ প্রশমিত হয়।

বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করা-

রাসূল (সা.) আমাদের সকল কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার শিক্ষা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,’ যখন কেউ ঘরে প্রবেশকালে বিসমিল্লাহ বলে এবং পানাহারের সময় বিসমিল্লাহ বলে, তখন শয়তান পরস্পরকে বলে; এই ঘরে তোমাদের থাকার ব্যবস্থা নেই। খাবারেরও ব্যবস্থা নেই’।

সুতরাং আপনাদের প্রতি কাজের শুরুতে এই আমলটি অবশ্যই করবো ইনশাআল্লাহ
আল্লাহর ওপর পূর্ণাঙ্গ ভরসা করাকে বলে তাওয়াক্কুল। এর দ্বারাও জীবনের পেরেশানি দূর হয়। জীবনে বরকত লাভ হয়। রাসূল (সা.) বলেন, যদি তোমরা হক আদায় করে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতে পার তাহলে এমনভাবে রিজিক লাভ করবে যেমন পাখী লাভ করে থাকে। সে সকালে শূন্য উদরে বের হয়, আর সন্ধ্যায় ভরা পেটে নীড়ে ফিরে আসে।সুতরাং আমাদের ও উচিত হতাশায় না ভুগে নিজেদের কাজ সঠিক ভাবে করা এবং বরকত পাওয়ার জন্য আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা

বিয়ে করা-

রিজিকে বরকত বাড়ানোর অন্যতম কার্যকরী আমল হলো বিয়ে করা। যারা অবিবাহিত তারা নেক নিয়তে বিয়ে করলে মহান আল্লাহ তাদের অভাব দূর করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩২)। আল্লাহ এখানে সরাসরি সচ্ছলতা দান করার ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং যারা অর্থের অভাবে বিয়ে করছেন না তাদের আল্লাহর এই ঘোষণায় বিশ্বাস রেখে দ্রুত বিয়ে করা উচিত। কারণ বিবাহ আমাদের রিজিকে বরকত দান করে এবং চরিত্র হেফাজত করে।

আল্লাহর জন্য হিজরত করা

আল্লাহ তাআলা অনেক নেয়ামত দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে রেখেছেন, তা অনুসন্ধানে হিজরত বা দেশে-বিদেশ ভ্রমণ করা। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াব্যাপী ভ্রমণ তথা রিজিকের তালাশ করার নির্দেশনা দিয়েছে ।
উপরে উল্লেখিত আমল গুলো ঠিক ভাবে পালন করতে পারলে আল্লাহ আমাদের রিজিকের বরকত দান করবে এবং আমাদের অভাব মোচন করবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ আল্লাহ অসীম প্রাচুর্যের মালিক। তিনি কাওকে দিতে কার্পণ্য করেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *